14rh-year-thenewse
ঢাকা
আজকের সর্বশেষ সবখবর

আজ শ্রীসীতা নবমী, জেনে নিন তাৎপর্য ও করণীয়

ডেস্ক
May 6, 2025 7:38 am
Link Copied!

আজ শ্রীসীতা নবমী। বৈশাখ মাসের শুক্লপক্ষর নবমী তিথিতে মাতা সীতার পৃথিবীতে আবির্ভাব হয় বলে মনে করা হয়। এই কারণে বৈশাখের শুক্ল নবমী তিথিকে সীতা নবমী বলা হয়। এই সীতা নবমীর ব্রত হিন্দু মহিলা, বিশেষত বিবাহিত মহিলাদের কাছে পূণ্য ব্রত। এই ব্রত পালনে স্বামীর কল্যাণ, দীর্ঘায়ু এবং সংসারের মঙ্গল হয়।

লক্ষ্মীর অবতার, বিষ্ণুর সপ্তম অবতার রামচন্দ্রের স্ত্রী সীতা। সীতা নবমী তিথিতে লক্ষ্মীদেবী মা সীতা রূপে পূজিতা হন। সীতার সঙ্গে বিষ্ণুর অবতার শ্রীরাম, লক্ষ্মণ এবং হনুমানজীও পূজিত হন।

সীতা নবমীর ব্রত পালনের মধ্য দিয়ে লক্ষ্মীনারায়ণেরই পূজা করা হয়। সীতা নবমী তিথিতে লক্ষ্মীনারায়ণের পূজা, হনুমানজীর পূজা বিশেষ শুভফল দায়ক।

সীতা নবমী, কালজয়ী মহাকাব্য রামায়ণে মিথিলার রাজা জনক-এর কন্যা এবং অযোধ্যার রাজা শ্রী রামের স্ত্রী সীতার জন্মবার্ষিকী হিসেবে পালিত হয়। ভারতের কিছু অঞ্চলে, সীতা নবমী জানকী নবমী বা সীতা জয়ন্তী নামে পরিচিত। হিন্দু পঞ্জিকা অনুসারে, সীতা নবমী বৈশাখ মাসের শুক্লপক্ষর নবমী তিথিতে পালিত হয়, যা সাধারণত মে-জুন সময়কালে পড়ে। এবার সীতা নবমী পালিত হচ্ছে ২০২৫ সালের ৬ মে।

পৌরাণিক গ্রন্থ অনুসারে, মা সীতার জন্ম মঙ্গলবার পুষ্য নক্ষত্রে হয়েছিল। আসুন, জেনে নিই ২০২৫ সালে সীতা নবমীর শুভ তিথি কখন, পুজোর শুভ সময় কোনটি এবং এই দিনের কার্যকর প্রতিকারগুলি কী কী, যা আপনার জীবনকে সুখ ও সমৃদ্ধিতে ভরিয়ে দেবে।

সীতা নবমীর তিথি এবং শুভ সময়: বৈশাখ শুক্ল নবমী তিথি শুরু হয়: ০৫ মে, সকাল ০৭ টা ৩৫ মিনিটে, বৈশাখ শুক্ল নবমী তিথির সমাপ্তি: ০৬ মে, শোকাল ০৮ টা ৩৮ মিনিটে। এমন পরিস্থিতিতে, উদয় তিথি বিবেচনা করে, ৫ মে সীতা নবমী পালিত হবে।

জানা যায়, সে এক বৈশাখ মাসের উত্তপ্ত কাল। শুধু গ্রীষ্মকালের খর রোদই যে পীড়িত করে রেখেছিল আর্যাবর্তকে, এমনটা বললে অবশ্য ভুল হবে। সঙ্গে রয়েছে চার দিকে সমুদ্র দিয়ে ঘেরা, ত্রিকূট পর্বতের উপরে অবস্থিত রাক্ষসের দুর্ভেদ্য দুর্গ লঙ্কার প্রভাবও। ব্রহ্মার বরে প্রায় অবধ্য হয়ে উঠেছেন সেই স্বর্ণ দ্বারা প্রস্তুত দুর্গের অধিপতি দশানন। তাঁর করাল গ্রাসে রয়েছে মূলত দু’টি দিক- ভূমি এবং ধর্ম। একের পর এক যোদ্ধাদের পরাস্ত করে তিনি রাক্ষসরাজ্যের সীমানা বর্ধিত করে চলেছেন, আর্যাবর্তের বিশাল ভূমির অনেকটাই এখন তাঁর শাসনের অধীনে। অন্য দিকে, দেবতাদের পরাজিত করেছেন তিনি, নবগ্রহকে বেঁধে রেখেছেন নিজের প্রাসাদে, ব্রাহ্মণদের দিচ্ছেন না ধর্মাচরণের অধিকার। যাঁরা জপ-তপে মগ্ন, সেই সব ঋষিদের হত্যা করে তাঁদের রক্ত তিনি ছড়িয়ে দিচ্ছেন ভূমিতে, যাতে তা অনুর্বর হয়ে যায়।

এ হেন এক পরিস্থিতিতেই ঋষিদের পরামর্শে মিথিলার ধার্মিক প্রজাপালক রাজা জনক প্রবৃত্ত হলেন এক মহাযজ্ঞ। অবশ্য শুধু যজ্ঞই নয়, ঋষিদের পরামর্শে তাঁকে নিজে হাতে করতে হবে হলকর্ষণও, তবেই বন্ধ্যা ভূমি পুনরায় ঊষর হয়ে উঠবে। ঋষিরা ঘোষণা করেছিলেন বৈশাখ মাসের শুক্লপক্ষে সেই মহাযজ্ঞে প্রারম্ভ হোক! আর রাজা হলকর্ষণ করবেন পুণ্য নবমী তিথিতে। সেই মতো রুক্ষ ভূমিতে সাজিয়ে রাখা হয়েছে দুই বিশাল বৃষ, তাঁদের শৃঙ্গ-দেহ চর্চিত হয়েছে চন্দনে-সিঁদুরে; গলায় দেওয়া হয়েছে মঙ্গলমালা। রাজা জনক যথাসময়ে সেই বৃষদের সাহায্যে শুরু করলেন হলচালনা, রুক্ষ ভূমির বুকে বসে যেতে থাকল লাঙলের দাগ, উড়তে থাকল ধুলো।

কিন্তু আচমকাই সেই ধুলোর ঝড়ের মধ্যেও বুঝতে পারলেন রাজা- একটা কিছুতে ঠেকে গিয়েছে লাঙল, আর এগোনো যাচ্ছে না। অতঃপর হলকর্ষণ বন্ধ করে শুরু হল মাটি খোঁড়া। আর দেখতে দেখতে পাওয়া গেল পেটিকায় শয়ান এক অপূর্ব সুন্দরী কন্যা। নিঃসন্তান জনকের গৃহে সেই কন্যা নিয়ে এল আনন্দ, রাজ্যে নিয়ে এল বর্ষণ আর উর্বরতা। লাঙলের দাগকে বলা হয় সীতা আর একেও পাওয়া গিয়েছে সেই দাগের মুখে, তাই সীতা নামটাই সাব্যস্ত হল। জনকের কন্যা বলে জানকী এবং মিথিলার রাজকন্যা বলে মৈথিলী নামেও তাঁকেও চিনলেন সবাই! আজ সেই পুণ্যতিথি, মাতা সীতার জন্মজয়ন্তী। নবমী তিথি শাস্ত্রমতে শুরু হয়েছে ৫ মে দুপুর ১২টা ২৯ মিনিট থেকে, শেষ হবে ৬ মে দুপুর ১২টা ৩৭ মিনিটে।

১. পূজা বিধি

ভোরে ঘুম থেকে উঠে সূর্যোদয়ের আগে স্নান করে নাও।

পূজা ঘর পরিষ্কার করুন এবং সর্বত্র গঙ্গা জল ছিটিয়ে দিন।

এর মূর্তি স্থাপন করুন ভগবান রাম, দেবী সীতা, মিঃ লক্ষ্মণ, এবং হনুমান জি একটি লাল কাপড়ে মুড়ে মন্দিরটিকে ফুল দিয়ে সাজান।

ভগবান ও দেবীর উদ্দেশ্যে তাজা ফুলের মালা অর্পণ করুন।

এটি মাতা সীতার উদ্দেশ্যে বিন্দু, সিঁদুর, কাজল, মেহেন্দি এবং আরও অনেক কিছুর মতো ১৬টি স্ট্রিংগার অর্পণ করে।

প্রতিমার সামনে ফল এবং প্রসাদ রাখুন।

এবার, ঘি প্রদীপ জ্বালিয়ে আরতি শুরু করুন।

পূজার পর, আপনার বন্ধুবান্ধব এবং পরিবারের মধ্যে প্রসাদ বা ফল বিতরণ করুন। সুখী ও শান্তিপূর্ণ জীবনের জন্য মাতা সীতার কাছে প্রার্থনা করুন।

২.  আচার

ভগবান রাম, মাতা সীতা, লক্ষ্মণ জি এবং হনুমান জি-এর মূর্তির পূজা করুন।

এই দিনটি উপলক্ষে কঠোর উপবাস পালন করুন। কিছু লোক উপবাসের সময় ফল খায় এবং জল পান করে, আবার কেউ কেউ কিছু না খেয়েই উপবাস করেন।

এই দিনটি উদযাপনের জন্য আধ্যাত্মিক গভীরতা অর্জনও একটি ভালো বিকল্প। অতএব, আধ্যাত্মিক বই পড়ুন, ধ্যান করুন এবং আপনার পছন্দের অন্য যেকোনো অনুশীলন করুন।

এই দিনটি উদযাপনের আরেকটি পদ্ধতি হল দান। আপনি যাদের প্রয়োজন তাদের পোশাক, খাবার এবং অর্থ দান করতে পারেন।

মাতা সীতার অন্যান্য নাম এবং তাদের অর্থ

রাজা জনক-কন্যা দেবী মাতা সীতার অনেক নাম রয়েছে যা অন্যরা তাঁকে ডাকে। এখানে তাঁর কিছু সুপরিচিত নাম এবং তাদের অর্থ দেওয়া হল:

জানকী: মাতা সীতার সবচেয়ে সাধারণ নামগুলির মধ্যে একটি, এবং এটি রাজা জনক-এর কন্যার প্রতীক।

জনকনন্দানি: জনক হলেন রাজা জনক-এর কন্যা। আর “নন্দনী”যিনি আনন্দ আনেন। এই নামটিই রাজা জনক-এর জীবনে আনন্দ আনেন।”

মৈথিলী: এটি মিতালার রাজকন্যাদের নির্দেশ করে।

বৈদেহী: রাজা জনক শারীরিক চেতনা অতিক্রম করে অতীন্দ্রিয় লিঙ্গের অবস্থায় চলে গেছেন এবং বৈদেহ নামে পরিচিত। তাই, এই নামটিকে রাজার কন্যা হিসেবেও বিবেচনা করা হয়।

জনকাত্মজা: জনক মাতা সীতার পিতার জন্য ব্যবহৃত হয় এবং “আত্মজা”আত্মার একটি অংশের জন্য।” তাই, যখন একসাথে থাকে, তখন এটি জনক আত্মা নামে পরিচিত।

http://www.anandalokfoundation.com/