বাংলাদেশে হিন্দু নির্যাতনে ভারত বরাবরই নিস্ক্রিয় থাকে। অতীতে কংগ্রেস পরিচালিত সরকারগুলো কোনদিন বাংলাদেশে হিন্দু নির্যাতন নিয়ে কোন ধরনের প্রভাব বিস্তার করেনি নুনতম নিন্দাও করেনি। এবার বাংলাদেশে সরকার পরিবর্তনকে কেন্দ্র করে হিন্দুদের উপর নির্যাতন নিপীড়ন বাড়িঘর দোকানপাটে হামলা অগ্নিসংযোগ এবং মেয়েদের বাড়ি থেকে তুলে নেয়ার ঘটনায় ভারতের বিজেপি সরকার নড়েচড়ে বসেছে। ইতিমধ্যে তারা কূটনৈতিক এবং প্রশাসনিক ভাবে নজিরবিহীন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন।যা বাংলাদেশে বসবাসরত সংখ্যালঘু হিন্দুদের মধ্যে আশার সঞ্চার করেছে।
গত ৫ই আগস্ট শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর বাংলাদেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে ভারত নিবিড় ভাবে পর্যবেক্ষণ করে আসছিলো। বাংলাদেশ থেকে হিন্দুদের উপর নির্যাতনের খবর যখন আসছিলো তখন প:বঙ্গের বিরোধী দলের নেতা শুভেন্দু অধিকারী উদ্বেগ প্রকাশ করে এক কোটি শরনার্থীদের আশ্রয়ের জন্য মানুসিক প্রস্তুতির কথা বলেছিলেন এবং তিনি দিল্লিতে গিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর সাথে দেখা করে বাংলাদেশে হিন্দু নির্যাতন বন্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানিয়েছিলেন।
পরবর্তীতে বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হলে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এক্স হ্যান্ডেলে নুতন দায়িত্ব প্রাপ্ত ড:মুহাম্মদ ইউনুসকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেছিলেন, বাংলাদেশে হিন্দু ও অন্য সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেছিলেন।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তটি গ্রহণ করেছিলো ভারত সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়। স্বাধীনতার পর ভারত সরকার শ্রীলঙ্কার পর পড়শী কোন দেশের আভ্যন্তরীণ বিষয়ে এতটা নাকগলাতে দেখা যায়নি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দুদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করে যার তত্ত্বাবধায়ক থাকবেন এডিজি বিএসএফ এবং ইস্টার্ন কমান্ডের আধিকারিকরা। সেই টিমে আরও রয়েছেন বিএসএফের সাউথ বেঙ্গল হেড কোয়াটারের আইজি প্ল্যানিং এবং ডেভেলপমেন্টের সদস্য ল্যান্ড এন্ড প্লটস অথরিটি অফ ইন্ডিয়ার আধিকারিক এবং সচিব। এটি একটি সর্বাত্মক প্রস্তুতিমূলক কমিটি। পরিস্থিতি বাধ্য করলে এই কমিটি কিকি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে তা প্রকাশ্যে না আসলেও প্রতিপক্ষ বাংলাদেশ ঠিক বুঝতে পাচ্ছিলো পরিস্থিতি কোন দিকে গড়াচ্ছে।
নিজেদের অধিকার বুঝে নেয়ার জন্য ভারত এবার বাংলাদেশের হিন্দুদের সীমান্ত পার হতে দেয়নি। এবং এতে বাংলাদেশের হিন্দুদের মধ্যে যে অধিকার সচেনতা ফিরে এসেছে তা গত এক সপ্তাহে ঢাকা চট্টগ্রাম সিলেট খুলনা বরগুনা সহ প্রায় প্রতিটি জেলা শহরে আবালবৃদ্ধবনিতা যেভাবে প্রতিবাদে ফেটে পড়েছিলো ভারত এই প্রতিক্রিয়াটিই দেখতে চেয়েছিলো।
ভারত এবার অন্তত বাংলাদেশের নির্যাতিত নিপীড়িত হিন্দুদের বুঝিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে যে অধিকার প্রতিষ্ঠায় ভারত সব সময় হিন্দুদের পাশে থাকবে। আভ্যন্তরীণ ভাবেও বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান এবং ছাত্র নেতৃবৃন্দ তড়িঘড়ি যে তৎপরতায় ঢাকেশ্বরী মন্দির এবং যমুনা গেস্ট হাউস তৎপর হয়েছে তাতে ভারত কূটনৈতিক এবং প্রশাসনিক ভাবে কি ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে তা পরিস্কার হয়ে গিয়েছে।
বিজেপি সরকারের এই পদক্ষেপে বাংলাদেশের এক শ্রেণির মানুষ খুশি হতে পারেনি। কারণ বিজেপি হিন্দু মৌলবাদীদের দল আর কংগ্রেস তাদের খুব প্রিয় দল। কারণ বাংলাদেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে সরকার ফেলে দেয়ার পিছনে ভারতের বিরোধী দলের কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর সাথে লন্ডনে বিএনপির যুবরাজ তারেক রহমান যে গোপনে বৈঠক করেছিলেন তা প্রকাশ্যে এসে গিয়েছে।
দিন বদলের এই খেলায় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ হেরেছে আর ইসলামি মৌলবাদীরা জয়লাভ করেছে।
