14rh-year-thenewse
ঢাকা
আজকের সর্বশেষ সবখবর

বাংলাদেশে ভূতত্ত্ব বিষয়ে জানা লোকদের ডাকা হয় না

SDutta
April 21, 2025 8:40 pm
Link Copied!

সুমন দত্ত: বাংলাদেশে ভূতত্ত্ব বিষয়টির সঙ্গে পরিচিত নয় বেশিরভাগ মানুষ। যে কারণে কোনো নদী গবেষণায় কিংবা পরিবেশ, কৃষি ইত্যাদি নিয়ে আলোচনায় ডাকা হয় না ভূতাত্ত্বিকদের। এমন কি চাকরিতে বিভিন্ন পদ সৃষ্টি করে নিয়োগের বেলায় দেখা যায় ভূতত্ত্ব পড়ে যে স্নাতক ডিগ্রি নিল তাকে ডাকা হয়নি। এমন এক প্রেক্ষাপটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে দেশের ভূতত্ত্ব শিক্ষা।

সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবের মাওলানা আকরাম খা হলে এক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন ড. আনোয়ার জাহিদ। তিনি বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক। এদিন তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সভাপতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক ড. বদরুল ইমাম। এছাড়া আরো ছিলেন অধ্যাপক ড. জামাল উদ্দিন, অধ্যাপক নেহার উদ্দিন, অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন ভূঁইয়া।

ড. আনোয়ার জাহিদ বলেন, দেশে ভূতত্ত্ব নিয়ে কাজ করার লোক কম। শিক্ষা ব্যবস্থায় এই বিষয়টির প্রতি অবহেলা দেখা যাচ্ছে। যে কারণে দেশের উন্নয়নে এটির ভূমিকার কথা স্বীকার করা হচ্ছে না। বাংলাদেশে তেল গ্যাস অনুসন্ধানে বিশাল ভূমিকা রয়েছে ভূতত্ত্ববিদদের। দেশের অধিকাংশ গ্যাস ক্ষেত্র আবিষ্কার হয়েছে ভূতাত্ত্বিকদের দেখানো পথে। অথচ এদের অবদান ছোট করে দেখা হচ্ছে। আজ চাকরির বাজারে এই ডিসিপ্রিলিনের পাস করা শিক্ষার্থীদের ডাকা হয় না। অথচ প্রতিবেশী দেশে স্কুল কলেজ পর্যায় থেকে ভূতত্ত্ব পড়ানো হয়। আমাদের দেশে এটি স্নাতক পর্যায়ে পড়ানো হয়।

ড. বদরুল ইমাম বলেন, আমাদের দেশে তেল গ্যাস অনুসন্ধানে বিদেশ নির্ভরতা থাকবেই। কারণ গভীর সমুদ্রে তেল গ্যাস অনুসন্ধানে প্রযুক্তিগত সক্ষমতা আমাদের নেই। উন্নত বিশ্বে আছে। তাই অমাদেরকে তাদের কাছে যেতে হয়। তবে স্থলভাগে আমাদের অনুসন্ধান ক্ষমতা রয়েছে। পেট্রোবাংলা, বাপেক্স আমাদের বহু অনুসন্ধানে ভূমিকা রেখেছে। আমাদের প্রচেষ্টা থাকবে তেল গ্যাস অনুসন্ধানে সক্ষমতা অর্জন করার। তিনি বলেন “ভূতত্ত্ববিদরা অনেক কাজ করে কিন্তু কাজের স্বীকৃতি যথাযথভাবে পায় না। সুপারিশের দিকে নজর দেওয়া হলে এবং যদি স্বীকৃতি দেওয়া হয় তাহলে উন্নয়ন কার্যক্রমটা যথেষ্ট এগিয়ে যাবে।”

সংবাদ সম্মেলনে তিনি বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক সমিতির পক্ষে কিছু সুপারিশ ও প্রস্তাবনা তুলে ধরেছেন-

১. জাতীয় স্বার্থে খনিজ ও প্রাকৃতিক সম্পদ, বহু-গর্ভস্থ পানিসহ পানিসম্পদ, সুনীল অর্থনীতি, জলবায়ু পরিবর্তন, ভূমিকম্প, বন্যা, নদী ভাঙ্গনসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ, পরিবেশগত প্রভাব মূল্যায়ন ইত্যাদি সংশ্লিষ্ট নীতি-নির্ধারণ ও কর্মপরিকল্পনা তৈরির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অভিজ্ঞ ভূতত্ত্ববিদদের যুক্ত করতে হবে।

২. বাংলাদেশে ভূতাত্ত্বিক জ্ঞান ও বিজ্ঞান সংশ্লিষ্ট সব উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে ভূতত্ত্ববিদ পেশাজীবী ও গবেষকদের অন্তর্ভুক্ত করা।

৩. বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবং পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান পদসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সংস্থার শীর্ষ ও গুরুত্বপূর্ণ পদে ভূতত্ত্ববিদ পেশাজীবীর পদায়ন নিশ্চিত করতে হবে।

৪. বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নদ-নদীর গতি-প্রকৃতি সমীক্ষা, নদী শাসন, বাঁধ নির্মাণসহ পানির বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণে ভূতাত্ত্বিক ও ভূ-কারিগরী অনুসন্ধান ইত্যাদি কাজ পরিচালনায় ভূতত্ত্ববিদের পর্যাপ্ত পদ তৈরি করতে হবে।

৫. খনিজ সম্পদ আহরণ, ভূ-কারিগরী ও ভূ-গর্ভস্থ পানিসহ ভূতাত্ত্বিক বিজ্ঞান সংশ্লিষ্ট কর্মকান্ডে জড়িত এনজিওতে ভূতত্ত্ববিদ পেশাজীবী অন্তভূক্ত করা।

৬. সরকারের গ্রাউন্ডওয়াটার টাস্ক ফোর্স ২০০৪, পানি সম্পদ মন্ত্রনালয় এবং অন্যান্য সুপারিশের আলোকে ভূ-গর্ভস্থ পানির যথাযথ ও টেকসই ব্যবহার, ব্যবস্থাপনা ও পর্যবেক্ষণের জন্য ভূতাত্ত্বিক বিজ্ঞানের হাইড্রোজিওলজিষ্ট পেশাজীবীদের তত্ত্বাবধানে একটি আলাদা ও একক প্রতিষ্ঠান তৈরি করতে হবে।

৭. বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের আরও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভূতাত্ত্বিক বিজ্ঞান বিভাগ চালুসহ প্রাথমিক থেকে উচ্চ-মাধ্যমিক শিক্ষায় ভূতত্ত্ব বিষয় যুক্ত করতে হবে।

http://www.anandalokfoundation.com/