বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নামে বাংলাদেশে যা ঘটেছে তার পোশাকি নাম গনঅভ্যুত্থান কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এটি একটি ইসলামি বিপ্লব। সারা পৃথিবীতে যত ইসলামি বিপ্লব সংগঠিত হয়েছে তার সাথে বাংলাদেশে সংগঠিত বিপ্লবের হুবহু মিল রয়েছে।
এই আন্দোলনে ছাত্র নামধারী যারা নেতৃত্ব দিয়েছে তারা কৌশলগত কারণে এখনো এই আন্দোলনকে ইসলামি বিপ্লব বলছেনা। কিন্তু এই অভ্যুত্থানের পরবর্তী ঘটনাবলী পর্যবেক্ষণ করলে ঐতিহাসিক ভাবেই ইরানের ইসলামি বিপ্লব আফগানিস্তানে তালেবানি শাসন কায়েমের পরম্পরার সাথে মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
৭৫এ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করার পর মেজর ডালিম টেলিভিশনে এক ঘোষণায় বাংলাদেশকে ইসলামি প্রজাতন্ত্র হিসাবে ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে খন্দকার মোশতাক বাংলাদেশকে ইসলামি প্রজাতন্ত্র হিসাবে ঘোষণাকে অস্বীকার করেছিলেন। নেপথ্যে ভারতের একটি কূটনৈতিক চিঠি পেয়ে মোস্তাক বাংলাদেশকে ইসলামি প্রজাতন্ত্র হিসাবে ঘোষণা থেকে ফিরে এসেছিলেন।
সেই কারনেই বৈষম্য বিরোধী ছাত্রনেতারা প্রকাশ্যে এই অভ্যুত্থানকে ইসলামি বিপ্লব বলছেনা ঠিকই কিন্তু ইসলামি বিপ্লবের ঐতিহ্যকে পাথেয় করে তারা রাষ্ট্রের সমস্ত ক্ষমতা বকলমে এখনো তাদের হাতেই রেখে দিয়েছে।
যেভাবে গনঅভ্যুত্থানের পর সারাদেশে মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহ্য মন্ডিত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিকৃতি ঐতিহাসিক নিদর্শন জাতির জনকের ভাস্কর্য রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর থেকে শুরু করে চিত্রকর জয়নাল আবেদীন সিধু-কানুর প্রতিকৃতি বিভিন্ন প্রসিদ্ধ লাইব্রেরি ময়মনসিংহের বিশ্ববিখ্যাত গ্রীক দেবী ভেনাসের মূর্তি মাটির সাথে মিশিয়ে দেয়া হয়েছে তাতে মুক্তিযুদ্ধের স্মারক যত প্রতিকৃতি সংরক্ষিত ছিল তা যে উৎসাহ উদ্দীপনায় ভাঙা হয়েছে তাতে ৭১এর স্বাধীনতাকে অস্বীকার করা হয়েছে।
এটি সরকার পরিবর্তনের কারণে হয়েছে এমন নয় কারণ অতীতে এই দেশে আরও অন্তত ৫ বার প্রায় একই ভাবে সরকার পরিবর্তন হয়েছে কিন্তু কোন বারই মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহ্যকে অস্বীকার করে স্বাধীনতার আত্মত্যাগকে ভুলুন্টিত করে জাতীয় ঐক্যকে বিতর্কিত করে এমন ভাবে ধ্বংস যজ্ঞের মাধ্যমে বাঙালির কৃষ্টি সংস্কৃতি ঐতিহ্যকে প্রশ্নের সামনে দাড় করানো হয়নি।
দেশটি আওয়ামী লীগের ছিলো না স্বাধীনতা সংগ্রামের একচ্ছত্র আধিপত্য আওয়ামী লীগের একার ছিলো না। কিন্তু গনঅভ্যুত্থানের নামে যা হলো তা ইসলামি বিপ্লব ছাড়া আর কিছু হতে পারেনা।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্রনেতারা এখনো পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি চিহ্ন ধ্বংসে এখনো পর্যন্ত একটি কথাও বলেনি। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড:মুহাম্মদ ইউনুসকে জাতির পিতার ভাস্কর্য এবং মুক্তিযুদ্ধের স্মারক ঐতিহ্য ধ্বংসের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে তিনি এ ব্যাপারে শেখ হাসিনাকে জিজ্ঞেস করতে বলেছেন। অর্থাৎ বাংলাদেশকে একটি পরিপূর্ণ ইসলামি প্রজাতন্ত্র কায়েমে তারও সমর্থন রয়েছে।
শেখ হাসিনা ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেয়নি যার পরিনতিতে বাংলাদেশ একটি আফগানিস্তান নয়তো সিরিয়া অথবা পাকিস্তান হবে এতে কোন সন্দেহ নেই।
