13yercelebration
ঢাকা
আজকের সর্বশেষ সবখবর

অদম্য তামান্নাকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহেনার ফোন

নিউজ ডেস্ক
February 15, 2022 8:19 pm
Link Copied!

আবুল কালাম আজাদ, যশোর : পা দিয়ে লিখে টানা চতুর্থবার জিপিএ-৫ পাওয়া অদম্য তামান্না আক্তার নূরার সাথে ফোনে কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার শেখ রেহেনা। সোমবার সন্ধ্যায় হোয়াটসঅ্যাপে ফোন দিয়ে তারা তামান্নাকে অভিনন্দন জানান এবং সাহস হারাতে নিষেধ করেন। সাহস আর মনোবল থাকলে তুমি অনন্য উচ্চতায় পৌঁচ্ছাতে পারবে বলেও সাহস যোগান।

তামান্না নূরা জানান, ঘড়ির কাঁটায় তখন সোমবার সন্ধ্যা ৬ টা ৫৬ মিনিট। পড়াশুনার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। হঠাৎ হোয়াইঅ্যাপে ফোন। ফোন রিসিভ করতেই ফোনের ওপাশের কন্ঠস্বর আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলছিলাম। আমি কি তামান্নার সাথে কথা বলছি। ফোনের ওপাশের কণ্ঠস্বর শুনে ঘাবড়ে যান তামান্না আক্তার নূরা। এরপর তাকে অভিনন্দন জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ক্ষণিকের জন্য তামান্না বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে কেঁদেই ফেললেন। তাকে কান্না থামাতে বললেন প্রধানমন্ত্রী। কান্না থামিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সালাম দেন তামান্না। এ সময় তামান্না তার সাথে (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) সাথে দেখা করার ইচ্ছা এবং তার স্বপ্ন পূরণে প্রধানমন্ত্রীকে পাশে চান।

প্রধানমন্ত্রী তার স্বপ্ন পূরণে পাশে থাকার আশ্বাস দেন। আর তামান্নাকে “বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টে” একটা আবেদন করার পরামর্শ দেন। ওই ট্রাস্টের মাধ্যমের তাকে সকল সহযোগিতা দিবেন বলে তামান্নাকে জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর সাথে তামান্নার টানা ৪ মিনিটের কথাপোকথনে প্রধানমন্ত্রী তামান্নাকে একাধিকবার সাহস হারাতে নিষেধ করেন। সাহস আর মনোবল থাকলে তুমি অনন্য উচ্চতায় পৌঁচ্ছাতে পারবে।

যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার বাঁকড়া আলীপুর গ্রামের রওশন আলী ও খাদিজা পারভীন শিল্পী দম্পতির সন্তান তামান্না আক্তার নূরা। পা দিয়ে লিখে এইচএসসিতেও জিপিএ-৫ পেয়েছে অদম্য তামান্না। এ নিয়ে পাবলিক পরীক্ষায় টানা চতুর্থবার জিপিএ-৫ পেয়েছে ।

গত ২৪ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করাসহ দুটি স্বপ্নের কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠি লিখেছিলেন তামান্না। সেই চিঠির পেক্ষিতে সোমবার বিকেল ও সন্ধ্যায় ফোন দিয়ে তামান্নাকে অভিনন্দন জানায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহেনা। একই সাথে তারা দুই বোনই তামান্নার স্বপ্নপুরনে যেকোন সহযোগিতা করার আশ্বাস দেন।

এর আগে বিকাল সাড়ে ৪ টার দিকে তামান্নার হোয়াইঅ্যাপে নাম্বারে ফোন দেন প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোট্ট বোন শেখ রেহেনা। ফোন রিসিভ করতেই তামান্নার ফোনের ওপাশের কন্ঠস্বরের ব্যক্তি বলেন আমি লন্ডন থেকে শেখ রেহেনা বলছি। আমি কি তামান্না নূরার সাথে কথা বলছি। তখনই কান্না করতে থাকে তামান্না। কান্না থামাতে বলে শেখ রেহেনা বলেন, কেঁদে না। টানা ভালো রেজাল্ট করায় তোমাকে অভিনন্দন। তোমার সংগ্রামীর কথা শুনেছি। তুমি খুব সাহসী। তুমি এগিয়ে যাও। আমরা দুই বোন বেঁচে থাকা পর্যন্ত তোমার সহযোগিতা করে যাবো। যারা সাহস রেখে চলে তারা কখনো হেরে যায় না।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আর তার বোন শেখ রেহেনার সঙ্গে ফোনে কথা বলতে পেরে দারুণ খুশি তামান্না। তিনি বলেন, প্রথমে দুই জনেই সাথে কথা বলতেই ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। প্রবল মধুর আবেগে থর থর করে কাঁপছিল আমার ভেতরটা। মনে হচ্ছে আমার জীবনে সৃষ্টি হয়েছে ইতিহাস। অনভূতি তো আপনাদের বুঝাতে পারবো না। এতোটাই আনন্দিত হয়েছিলাম যে, হাঁসতে পারেনি কেঁদে ফেলেছিলাম। তবে সরাসরি প্রধানমন্ত্রীকে তার পিছনের গল্প শুনাতে চেয়েছিলাম। তবে মনে হয় ওনি ব্যস্ত থাকার কারণে বেশি কথা বলেননি তিনি। তবে আমাকে নিয়মিত ভালোভাবে পড়াশুনা এবং নিজের যত্ন নিতে বলেন।

তামান্নার বাবা রওশন আলী বলেন, গত ২৪ জানুয়ারি যশোরের জেলা প্রশাসকের পরামর্শে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবর চিঠি লিখেছেন তামান্না নূরা। তামান্নার লেখা চিঠি প্রথমে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তার পরে যশোরের জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। একই সাথে তামান্নার আকা বিভিন্ন ছবিও দেওয়া হয় ঐ চিঠির সাথে। পরম করুণাময় আল্লাহর অসীম দয়ায় তামান্নার সাথে আজকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহেনা কথা বলেছে। আশাকরি সবার দোয়ায় তামান্না তার স্বপ্ন পূরন হবে।

যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার বাঁকড়া বাঁকড়া ডিগ্রি কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এবার উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিলেন। রোববার প্রকাশিত ফলাফলে এসএসসির মতো এইচএসসিতেও জিপিএ-৫ পেয়েছেন তিনি। এর আগে তামান্না ২০১৯ সালে যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার বাঁকড়া জনাব আলী খান মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছিলেন। একই ফল করেছিলেন পিইসি ও জেএসসিতেও। বাবা রওশন আলী ঝিকরগাছা উপজেলার ছোট পৌদাউলিয়া মহিলা দাখিল মাদ্রাসার (ননএমপিও) শিক্ষক। মা খাদিজা পারভীন গৃহিণী।

তিন ভাইবোনের মধ্যে তামান্না সবার বড়। ছোট বোন মুমতাহিনা রশ্মি ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। ভাই মুহিবুল্লা তাজ প্রথম শ্রেণিতে পড়ে।

http://www.anandalokfoundation.com/