× Banner
সর্বশেষ
ভারত আবারও জাতিসংঘের মঞ্চে পাকিস্তানকে উন্মোচিত করল সন্ত্রাসবাদের বিষয়ে ভারতের অবস্থান স্পষ্ট করলেন জয়শঙ্কর আমেরিকার সঙ্গে নয়, চীনের সাথে কৌশলগত সম্পর্ক পাকিস্তানের: খাজা আসিফ নড়াইলে পরিবেশ অধিদপ্তরের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে খাল-বিলসহ বিভিন্ন জলাশয় থেকে অবাধে শামুক-ঝিনুক আহরণ প্রবাসীরা বাংলাদেশের অবিচ্ছেদ্য অংশ -প্রধান উপদেষ্টা আজ ২৮ সেপ্টেম্বর (১১ আশ্বিন) রবিবারের দিনপঞ্জি ও ইতিহাসের এইদিনে পর্যটনের মূল উদ্দেশ্য পারিবারিক আনন্দ সবার মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া- বিমান উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন তারুণ্যের উৎসব উদযাপন উপলক্ষে নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা ময়মনসিংহের দুর্গাবাড়ি পূজামণ্ডপ পরিদর্শন করেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা সালথায় সাংবাদিককে প্রকাশ্যে মেরে ফেলার হুমকি দিল শ্রমিকদল ও যুবদল নেতা

সভ্যতা, বিজ্ঞান ও আধ্যাত্মিক প্রগতি

admin
হালনাগাদ: বৃহস্পতিবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০১৫

সভ্যতা, বিজ্ঞান ও আধ্যাত্মিক প্রগতি

-শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকার

আজকের আলোচনার বিষয় হবে “সভ্যতা, বিজ্ঞান ও আধ্যাত্মিক প্রগতি”।মানুষের বিভিন্ন ভাবের অভিব্যক্তির সামূহিক নাম ‘কালচার’ বা ‘সংস্কৃতি’ । শুরুতেই আমি তোমাদের বলে রাখছি, গোটা মানুষ জাতির সংস্কৃতি একটাই।

সভ্যতা কী? আমাদের জীবনের বিভিন্ন অভিব্যক্তির মধ্যে শিষ্টাচারের যে সূক্ষ্ম ভাবটির সংস্পর্শে আমরা আসি তাকেই বলে সভ্যতা। একটা উদাহরণ দিই। মনে করো বাড়ীতে একজন অতিথি এসেছেন। আমরা নিরুত্তাপ ভাবে তাকে “এসো” বা “আসুন” বলে আহবান করতে পারি, আবার স্বাগত সম্ভাষণ জানিয়ে এও বলতে পারি, “অনুগ্রহ করে আসুন” বা “আসুন, আসুন, ভেতরে আসুন”। এই যে অতিরিক্ত ভাষা বা ভাবের দ্বারা ভদ্র সম্ভাষণের অভিব্যক্তি এটাই সভ্য বা সভ্যতা-সম্মত আচরণ, কারণ এখানে শিষ্টাচারের সূক্ষ্ম ভাবটা স্বতঃস্ফুর্ত। স্পষ্টতই দেখা যাচ্ছে সাধারণ নিরুত্তাপ আহবান সূচক ‘এসো’ বা ‘আসুন’ কথাটা সম্ভাষণের উত্তাপরহিত, এটা শিষ্টাচারের অভাবেরই দ্যোতক। সুতরাং আমরা দেখতে পাচ্ছি, সংস্কৃতি বা কালচারের ক্ষেত্রে ভাল-মন্দ দুটো দিকই আছে, কিন্তু শিষ্টাচারের যে সূক্ষ্মভাব সেইটাই সভ্যতার কষ্টিপাথর। সংস্কৃতি বা কালচারের মাধ্যমে শিষ্টাচারের যে সূক্ষ্ম বোধ আমরা পাই, সেটা মানুষের সূক্ষ্ম বিচার-ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। আমরা মানুষের সেই সব আচার-আচরণকেই সভ্য বলতে পারি যা বৃহত্তর ক্ষেত্রে মানুষের সূক্ষ্ম বিচার ক্ষমতার পরিচয় বহন করে। অনেক সময় দেখা যায়, কোন বিশেষ গোষ্ঠীর জনসাধারণের আচার-আচরণ বিচারের সমর্থন লাভ করেছে, কিন্তু অন্য কোন গোষ্ঠীর আচার-আচরণ বিচারের সমর্থন লাভ করছে না। এখন যদি ওই বিশেষ বিচারে প্রথমোক্ত গোষ্ঠীকে সভ্য ও অপর গোষ্ঠীকে অর্ধসভ্য বলি , তাহলে সেটাও যুক্তিযুক্ত হবে না।

ভারতীয় সমাজ ব্যবস্থায় নারীকে মায়ের মর্যাদা দেয়া হয়েছে । কিন্তু বাস্তব ক্ষেত্রে তাদের সে রকম সন্মান দেখানো হয় না। অপর পক্ষে ইউরোপীয় সমাজে নারীর যদিও মায়ের মর্যাদা নেই, কিন্তু বাস্তব ক্ষেত্রে নারীরা নিশ্চিত ভাবে পুরুষের সমান অধিকার ও সন্মান ভোগ করে থাকেন। এখন এ দু’টোর মধ্যে কোনটি অধিকতর সভ্য, এটা বলা খুবই শক্ত। এক্ষেত্রে আমি বলব কাজ-কর্মে, আচার-আচরণে বিচারের সমর্থন যতটা বেশী থাকবে, সভ্যতার  প্রকাশ তথা বিকাশও তত বেশী হবে।

সভ্যতা ও সংস্কৃতির মধ্যেকার পার্থক্য খুবই সূক্ষ্ম। সংস্কৃতি জীবনের সকল অভিব্যক্তির সামূহিক রূপ। সংস্কৃতি বৌদ্ধিক স্তরের অভিব্যক্তি, কিন্তু সভ্যতা জীবনের ভৌতিক দিকটার প্রকাশ। সুতরাং একজন মানুষ ভৌতিক উন্নতির ব্যাপারে সভ্য হতে পারে, কিন্তু তার মানসিক বিকাশের দিকটা বিচার করলে সে উন্নত সংস্কৃতি সম্পন্ন নাও হতে পারে। বস্তুতঃ বৌদ্ধিক বিকাশ না হলে একজন মানুষের পক্ষে যথার্থ সভ্য হওয়া সম্ভব নয়।

এখন প্রশ্ন হল, সভ্যতার বিকাশ কেমন করে ঘটে? সভ্যতার সঙ্গে বিজ্ঞানের একটা ঘনিষ্ট যোগ রয়েছে, একই সঙ্গে এ দু’য়ের উন্নতি হয়। কিন্তু যেখানে বৈজ্ঞানিক উন্নতি সভ্যতার উন্নতিকে পেছনে ফেলে যায় সেখানেই সভ্যতার ভরাডুবি ঘটে। উদাহরণ হিসাবে মিসর ও গ্রীসের ইতিহাসের কথা ধরা যাক।যতদিন এই দুই দেশের বিজ্ঞানের জয়যাত্রা সভ্যতার অগ্রগতিকে অতিক্রম করেনি, ততদিন এই দুই দেশে সভ্যতার অগ্রগতি অব্যাহতই ছিল। কিন্তু বিজ্ঞানের উন্নতির ফলে যখন ভোগ্য সামগ্রী প্রচুর পরিমানে বেড়ে গেল, তখনই উভয় দেশের সভ্যতা ক্রমে ধ্বংস হয়ে গেল। কারণ তখন বিজ্ঞান সভ্যতার ওপরে স্থান অধিকার করেছে।

বিজ্ঞান কী? যা বস্তুর যথাযোগ্য ব্যবহার শিখিয়ে দেয় তাই বিজ্ঞান। সভ্যতার বিকাশ যেখানে একেবারেই নগণ্য, সেখানে যদি বিজ্ঞানের অগ্রগতি উন্নতির উচ্চতম শিখরে পৌঁছোয়, সেখানে বিজ্ঞান মানুষের কল্যাণের পরিবর্তে ধ্বংসেরই পথ প্রশস্ত করে।সুতরাং বিজ্ঞানের গবেষণা ও চর্চা যদিও অপরিহার্য তবুও একে সভ্যতার ওপরে স্থান দেওয়া মোটেই সঙ্গত কাজ নয়।

এখন আমি তোমাদের বোধিজ্ঞান সম্পর্কে দু’চারটে কথা বলব। ভারতবর্ষে তন্ত্রের যুগ থেকে শুরু করে গুপ্ত যুগ পর্যন্ত, সভ্যতা  ও বিজ্ঞান পাশাপাশি বিকাশ লাভ করেছিল, বিজ্ঞান কখনই সভ্যতার থেকে বেশী সন্মান পায়নি। গুপ্তযুগ ভারতের ইতিহাসে এক সুবর্ণ যুগ। গুপ্ত যুগের পর বিজ্ঞানের উন্নতির দিকে তেমন নজর দেওয়া হয়নি। এর ফলে হয়েছিল ক্রমাবনতি ও অধঃপতন। পাঠান যুগে সভ্যতা ও বিজ্ঞান কোনটিরই বিকাশ হয়নি। তাই সে যুগে সমাজের উন্নতিও রুদ্ধ হয়ে পড়েছিল।

মানব সমাজের সার্বিক প্রগতি তথা উন্নতির জন্যে সভ্যতা ও বিজ্ঞান উভয়কে একই সঙ্গে প্রোৎসাহিত করে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। যেখানে সভ্যতার উন্নতি দেখবে সেখানেই  লক্ষ্য করবে বৌদ্ধিক উন্নতিও  এর সঙ্গে রয়েছে। আবার যেখানে বিজ্ঞানের চর্চা রয়েছে সেখানে বৌদ্ধিক বিচার-বিশ্লেষণও প্রয়োজন। তাই সভ্যতা ও বিজ্ঞান উভয় ক্ষেত্রেই বৌদ্ধিক জ্ঞান অপরিহার্য। সভ্যতা ও বিজ্ঞানের সুন্দর সমন্বয়ের মধ্য দিয়েই আধ্যাত্মিক ও বোধিজ্ঞানের বিকাশ সম্ভব। যেখানে সভ্যতা ও বিজ্ঞানের সমন্বয় আদৌ নেই, সেখানেও বোধিজ্ঞানের বিকাশ সম্ভব হলেও সভ্যতা ও বিজ্ঞানের মধ্যে সুষম সমন্বয় থাকলে আধ্যাত্মিক প্রগতি ত্বরান্বিত হবে। সুতরাং যাঁরা যথার্থ জ্ঞানী তাঁরা এ দু’য়ের মধ্যে সমন্বয় সাধন করেই প্রগতির পথে এগিয়ে চলবেন। এ দু’য়ের মধ্যে সমন্বয় সাধন  ছাড়া বোধির জগতে প্রকৃত প্রগতির কথা চিন্তা করা অর্থহীন।

এখন আমাদের কর্ত্তব্য কী? আমরা বিজ্ঞানের চর্চা করব, কিন্তু সেই সঙ্গে সভ্যতার উন্নতির দিকেও সমান লক্ষ্য রাখতে হবে। প্রাচীন ভারত ও আধুনিক ভারতের মধ্যে একটা তুলনামূলক আলোচনা করলে দেখা যাবে আজকের যুগের বিজ্ঞান সে যুগের বিজ্ঞানের চেয়ে অনেক বেশী উন্নত। কিন্তু সে যুগের সভ্যতা, বিশেষ করে বশিষ্ট, বিশ্বামিত্র ও অষ্ট্রাবক্র মুনির যুগের সভ্যতা অবশ্যই অনেক উন্নত স্তরের ছিল। আজকের যুগের সভ্যতা ক্ষয়িষ্ণু কারণ বিজ্ঞান পাচ্ছে সভ্যতার চেয়ে অধিকতর মর্যাদা। আজকের বিজ্ঞানের মত যদি সভ্যতাকেও উঁচুতে তুলে ধরা যায় তাহলে উন্নতির চরম শিখরে ওঠা সম্ভব হবে।

(অভিমত-ষষ্ঠ খণ্ড থেকে সংগৃহীত)

 


এ ক্যটাগরির আরো খবর..