ইমদাদুল হক, পাইকগাছা-খুলনাঃ আগামী ৩১শে মে বিশ্ব তামাক মুক্ত দিবস। এ বছর সিগারেট বা তামাকের প্যাকেটের গায়ে তামাকের ক্ষতিরদিক সম্বলিত ছবির মাধ্যমে প্রকাশ করার জন্য জোর তাগিদ দেওয়া হইয়াছে। কিন্তু তা কতটা কার্যকর হচ্ছে সেটা দেখার বিষয়।
বর্তমানে বিভিন্ন সিগারেট কোম্পানীর অভাবনীয় পুরস্কারের লোভে ওঠতি বয়সের যুবকেরা আসক্ত হচ্ছে ধুমপায়ীতে। আমরা জানি ধুমপান মানে বিষ পান তবু আমরা ধুমপান করে থাকি। বর্তমান দেশে অসংখ্য তামাক কোম্পানী তাদের সিগারেটের খালি প্যাকেট গুলোকে একত্রিত করে সুন্দর ভাবে সাজিয়ে রাখছে বিভিন্ন পান, সিগারেটের দোকানে যাহাতে ক্রেতাদের চোখে পড়ে আকৃষ্ট হয় ধুমপায়কে।
ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে সিগারেটের দোকানে শেখ, নেভী, গোল্ডলিপ, ডারভি সহ অসংখ্যা কোম্পানী তাদের সিগারেটের খালি প্যাকেট সম্বলিত বোর্ড বিভিন্ন সিগারেটের দোকানে ঝুলিয়ে রাখছে। খুচরা সিগারেট বিক্রিতারা সিগারেট কোম্পানী থেকে দেওয়া ছোট ছোট শোকেসের গ্লাসের সামনে এবং দু’পাশে কোম্পানীর সিগারেট সাজিয়ে রেখে অবাদে বিক্রয় করছে। বিক্রয়তা জানুক বা না জানুক বিভিন্ন উপহার সামগ্রী পাওয়ার লোভে এই বিজ্ঞাপন প্রচার করছে।
ব্যবসায়ীদের প্রলব্দ করতে সিগারেট কোম্পানী বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করছে। মোড়ে মোড়ে সিগারেটের দোকান দেওয়ার জন্য ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের সুন্দর পানের বাক্স উপহার দিচ্ছেন। গুরুত্ব পূূর্ণ স্থানে যে খানে বেশি লোক সমাগম ঘটে সে খানে শোকেস নিয়ে বসে থাকায় এই সব বিক্রিতারা ব্যবসার নাম করে চালিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন সিগারেট কোম্পানীর প্রচারনা। কিন্তু এই রকম বিজ্ঞাপন যে নিশিদ্ধ তা হয়তো জানে না অনেক ব্যবসায়ীরা। সংশোধিত তামাক নিয়ন্ত্রন আইন ২০১৩ অনুযায়ী তামাক পূর্ণের সব ধরনের বিজ্ঞাপন নিশিদ্ধ সেটাই জানে না অধিকাংশ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। তামাক জাত দ্রব্যের সব ধরনের বিজ্ঞাপন নিশিদ্ধ হলেও তামাক কোম্পানী গুলো বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে তাদের বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করে তাদের প্রচারনা চালিয়ে যাচ্ছেন। আর সে সব ব্যবসায়ীরা সিগারেটের বিজ্ঞাপন দিকে রাজি থাকেন তাদেরকে দেওয়া হয় কোম্পানীর পক্ষথেকে ফ্রি বক্স উপহার। এ বক্সের সামনে ও দু’পাশে সিগারেটের বিজ্ঞাপনে প্রচারের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। আর এ জন্যই খুচরা ব্যবসায়ীদের দেওয়া হচ্ছে প্রতি মাসে টার্গেট।
টার্গেট পুরন করতে পারলে প্রতি মাসে দেওয়া হচ্ছে ৫০০/৭০০/- টাকা। আবার ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে কোন কোন সিগারেট কোম্পানী সিগারেটের খালি প্যাকেট জমা দিলে মিলছে অসংখ্য পুুরস্কার। আর এ পুরস্কার পাওয়ার লোভে ওঠতি বয়সের যুবকেরা ধাবিত হচ্ছে ধুমপায়ীতে। এদিকে সিগারেট বিক্রি করতে গিয়ে পরোক্ষ ধুমপানের শিকার হয়ে ক্যান্সার, এজমা, শ্বাষ কষ্ট, সহ নানা ধরনের জঠিল রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ছেন বিক্রেতারা। সচেতনার অভাবে ধুমপান নিজে না করেও অন্য ধুমপানের শিকার হয়ে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকির শিকার হচ্ছেন তারা।
দেশে তামাক জাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন নিশিদ্ধ হওয়ার পরও তামাক কোম্পানীর কৌশলগত অবৈধ এই সব বিজ্ঞাপন দেখে ওঠতি বয়সের যুবকেরা ধুমপানে আগ্রহী হয়ে উঠছে। তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমকে বাঁধা গ্রস্থ করতে তামাক কোম্পানী গুলো বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করছে। বাংলাদেশ তামাক নিয়ন্ত্রণে অনেকটা এগিয়ে রয়েছেন, এ সকল কার্যক্রমের মধ্যে তামাক নিয়ন্ত্রন করার জন্য সে সকল বিষয় গুরুত্ব দেওয়া দরকার তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে জনসচেতনা, তামাক জাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন নিশিদ্ধ করা, প্যাকেটের গায়ে স্বাস্থ্য সম্মত শর্তকোবানী দেওয়া, তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণ করা, পাবলিক প্লেসে ও পরিবহন গুরুত্ব পূর্ণ স্থানে ধুমপান বন্ধ করা। বর্তমান দেশে তামাক জাত দ্রব্যে ব্যহারের কারণে প্রতি বছর প্রায় ৫৮ হাজার লোক মারা যায় এবং প্রায় ৪০ হাজার লোক পঙ্গুত্ব বরণ করে।