যশোর অফিস:
যেন ঝড় বয়ে গেল মেয়েটির জীবনের ওপর দিয়ে। প্রভাবশালী ব্যক্তির ধর্ষণের শিকার হলো। অন্তঃসত্ত্বা হলো। এলাকাও ছাড়তে হলো। কিন্তু তাতেও রেহাই মেলেনি। অপহরণের শিকার হয়ে গর্ভের সন্তানকেও হারাতে হলো। এখন নিজের জীবন নিয়ে সংশয়।
একের পর এক এতো সব ঘটনা সিনেমাকেও হার মানায়। যশোর জেনারেল হাসপাতালের গাইনি ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন মেয়েটি তার অপহরণ ও সন্তান হত্যার বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ে।
সে জানায়, গত ২৩ অক্টোবর সকাল দশটার দিকে শহরের বারান্দী মোল্লাপাড়া এলাকা থেকে মুখ ঢাকা অবস্থায় এক মহিলা তাকে নাম-ঠিকানা জিজ্ঞেস করে মুখে গ্যাস জাতীয় কিছু একটা দিয়ে অজ্ঞান করে ফেলে। এরপর সন্ধ্যা ছয়টার দিকে ফেরিঘাট এলাকায় তার জ্ঞান ফেরে। সেখানে সে নিজেকে মাইক্রোবাসের মধ্যে দেখতে পায়। মাইক্রোবাসে চালক ছাড়াও মুখ ঢাকা এক মহিলা ও এক পুরুষ ছিল। তারা ঢাকায় নিয়ে পরের দিন ২৪ অক্টোবর একটি বাড়িতে মেয়েটির সিজারের ব্যবস্থা করে। সিজারের মাধ্যমে জন্ম দেওয়া সন্তানটি চারদিন পর মারা যায়। অষ্টম শ্রেনীতে পড়ুয়া ওই মেয়েটির মা যশোরের ঝিকরগাছার বাকড়া এলাকার দাউদ সরদারের বাড়িতে গৃহপরিচারিকার কাজ করতেন।
তার অভিযোগ, ওই বাড়িতে যাতায়াতের সুবাদে গৃহকর্তা দাউদ মেয়েকে ধর্ষণ করে। একপর্যায়ে মেয়েটি অন্তঃসত্ত্বা হলে হুমকি ও ভয়ভীতিতে তার পরিবার এলাকা ছেড়ে যশোর শহরের বারান্দীপাড়া এলাকায় আশ্রয় নেয়। এরপর গত ২০ অক্টোবর দাউদ সরদারকে আসামি করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুন্যাল যশোরে মামলা করেন মেয়েটির মা। মামলার পর গত ২৩ অক্টোবর মেয়েটি শহরের বারান্দী মোল্যাপাড়া এলাকা থেকে নিখোঁজ হয়। এ ঘটনায় ২৯ অক্টোবর রাতে মেয়েটির মা বাদী হয়ে যশোর কোতয়ালী থানায় অপহরণের মামলা করেন।
ডাক্তারি রিপোর্টে আগামী ৫ নভেম্বর মেয়েটির ডেলিভারির সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু এর আগেই অপহরণের পর সিজারের মাধ্যমে তার সন্তান প্রসব করানো হয়। মেয়েটি জানায়, গত শনিবার তার পেটের সেলাই কেটে ওইদিন গভীর রাতেই তাকে ঢাকার গাবতলী এলাকায় ফেলে রেখে যায় উল্লিখিত ব্যক্তিরা। রোববার সকালে সেখানে লোকজন তাকে কান্নাকাটি করতে দেখে বেনাপোলের গাড়িতে তুলে দেয়। বিকেলে সে বেনাপোলে মামার বাড়িতে পৌঁছায়। আর রাতে পুলিশ তাকে হাসপাতালে ভর্তি করে। যশোর জেনারেল হাসপাতালের গাইনি বিভাগের চিকিৎসক নিলুফার ইয়াসমিন জানান, মেয়েটির পেটে টেপ লাগানো ছিল। সেখানে কাটা দাগ রয়েছে। তবে মেয়েটি এখন সুস্থ আছে। হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) আলমগীর কবির বলেন, ‘সোমবার সকালে পুলিশের লিখিত রিপোর্ট পেয়েছি। তবে মেডিকেল বোর্ড গঠন ছাড়া এ বিষয়ে মতামত দেওয়া সম্ভব নয়। ৭২ ঘণ্টার মধ্যে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হবে।’
এদিকে, অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার পর যশোরে পালিয়ে এসে অপহরণের শিকার হওয়ায় মেয়েটি ও তার পরিবারের সদস্যরা আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মেয়েটির ডাক্তারি পরীক্ষার রিপোর্ট ও আইনি প্রক্রিয়ায় ও অভিযুক্তরা প্রভাব বিস্তার করতে পারে এমনও শঙ্কা তাদের। মেয়েটির পরিবারের সদস্যরা জানান, ধর্ষক প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের মধ্যে ভয় রয়েছে। মেয়েটিকে অপহরণ করে তার সন্তান হত্যা করেছে। এখন মেয়েটির জীবনও নিরাপদ নয়।যশোর কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শিকদার আককাছ আলী জানিয়েছেন, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মেয়েটির নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। রোববার মেয়েটির চিকিৎসাধীন ওয়ার্ড থেকে অভিযুক্তদের দু’জন স্বজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে।