আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগের দাবিতে বিএনপির নেতৃত্বে যুগপৎ আন্দোলন চলছে। সরকারের পদত্যাগের দাবিতে এক দফা কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। ২৮ জুলাই ২০২৩ শুক্রবার পল্টনস্থ বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় প্রাঙ্গনে মহাসমাবেশ চলছে। বৃষ্টি কিছুটা বিঘ্নিত করছে। এই মহাসমাবেশ থেকে বিএনপি কী তাদের প্রধান দাবি, নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সদস্য যারা হবেন তাদের নাম-পরিচয় ঘোষণা করবে?
যদি বিএনপি নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সদস্যদের নাম-পরিচয় প্রকাশ না করে তাহলে তাদের সরকার পতনের একদফা দাবি ফলবান হবে না, ভঙ্গুর হয়ে যাবে। তাদের কর্মসূচি অসম্পূর্ণ রয়ে যাবে। তাদের দাবি অপরিপক্ক ও অযৌক্তিক বলে পরিগণিত হবে। একটা অনিশ্চয়তার পথে অগ্রসর হবে তাদের সরকার পতনের এক দফার আন্দোলন সংগ্রাম।
দেশের প্রত্যেকটি মানুষ প্রত্যক্ষভাবে রাজনীতি না করলেও পরোক্ষভাবে কোন না কোন দল কিংবা কোন দলের মতাদর্শকে সমর্থন করেন। সুতরাং কোন ব্যক্তি নিরপেক্ষ নয়। যদি নিরপেক্ষ কোন ব্যক্তি না থাকেন তাহলে নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের সদস্য করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার কীভাবে গঠিত হবে? আর বিএনপিই বা কীভাবে নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের নাম-পরিচয় ঘোষণা করবে?
সংবিধানের মূল ভিত্তি গণতন্ত্র। গণতান্ত্রিক শাসণব্যবস্থায় অনির্বাচিত ব্যক্তিবর্গকে সদস্য করে এক মুহুর্তের জন্যও সরকার গঠনের কোন সুযোগ নেই। যদি অনির্বাচিত ব্যক্তিদের সদস্য করে সরকার গঠন করা হয় তাহলে তা হবে গণতন্ত্রের পরিপন্থী। সুতরাং নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিএনপির এই দাবি সম্পূর্ণ অসাংবিধানিক এবং অগণতান্ত্রিক। এই অগণতান্ত্রিক অযৌক্তিক দাবি কখনো ফলবান হবে না।
নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি যে অগণতান্ত্রিক অসাংবিধানিক এবং অযৌক্তিক তা বিএনপি বুঝে না তা নয়। তারা যথার্থই বুঝে এবং জানে। তারা জেনে-বুঝেই ক্ষেপে গিয়েছে।
২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত চারদলীয় জোট ২৯টি আসন লাভ করেছিল। এই নির্বাচনের নিরপেক্ষতা নিয়ে বিএনপির কোন অভিযোগ নেই। এতো কমসংখ্যক আসন লাভ করার কারণে ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বচন বিএনপি বর্জন করেছিল। ২০১৮ সালের ১১তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিএনপি জাতীয় ঐক্য ফ্রন্টের ব্যানারে অংগ্রহন করেছিল। এই নির্বাচনে বিএনপি আসন লাভ করেছিল ৭টি।
সুতরাং দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি কয়টা আসন লাভ করবে তা বিএনপি অনুধাবন করতে অক্ষম, বিষয়টি তেমন নয়। বিএনপি ভালোভাবে জানে, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয নির্বাচনে তাদের ভরাডুবি সুনিশ্চিত। তাই তারা নানা ছল-ছুতোয় নির্বাচন বর্জন করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চায়।
এছাড়া আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বেগম জিয়া কিংবা তারেক রহমান আইনগত কারণে নির্বাচন করতে পারবেন না। যদি তাদের অনুপস্থিতিতে বিএনপি নির্বাচন করে তাহলে বিএনপির রাজনৈতিক নেতৃত্ব এবং কর্তৃত্ব জিয়া পরিবারে থাকবে না। যদি কোন কারণে জিয়া পরিবারের হাত থেকে বিএনপির নেতৃত্ব অন্য কারো হাতে চলে যায় তাহলে তারেক রহমানের রাজনৈতিক মৃত্যু অবধারিত। সুতরাং বেগম জিয়া এবং তারেক রহমান তাদের অনুপস্থিতিতে নির্বাচন কস্মিনকালেও হতে দেবেন না।
সুতরাং নির্বাচন বর্জন করার জন্য যতরকম কায়দা কৌশল আছে তা প্রয়োগ করবে বিএনপি, এটাই স্বভাবিক। এধরণের সংকটে আওয়ামী লীগ পড়লে আওয়ামী লীগও তাই করতো। এভাবে নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি নিজেদের সাথে আত্মপ্রবঞ্চনা করছে। তারা তাদের নেতাকর্মীদের সঙ্গে প্রতারণা করছে, যা মোটেই বিএনপির জন্য শোভনীয় নয়। এটা বিএনপির জন্য নৈতিকতা বিবর্জিত।