ইসলামের দৃষ্টিতে মহান আল্লাহর প্রতি আনুগত্য ও আত্মত্যাগের প্রতীক হিসাবে পবিত্র ঈদুল আজহায় পশু কোরবানি করা হয়। আত্মত্যাগের নামে নিরিহ পশু হত্যার পিছনে কেবল ধর্মীয় ভাবাবেগ নাকি প্রতিহিংসাপরায়ণতা। ত্যাগের মহিমা হিংস্রতায় নয় সহনশীলতার মধ্য দিয়ে প্রকাশ পাক।
আল্লাহর আনুগত্য অর্জনের জন্য ইব্রাহিম তার পুত্রকে উৎসর্গ করার ইচ্ছা পোষণ করেছিলেন। ইব্রাহিম (স্বপ্নে) ঐশ্বরিক আদেশ পালন করতে যাচ্ছিলেন তখন আল্লাহর কুদরতে ইব্রাহিমের পুত্রের বদলে একটি ভেড়ার কোরবানি হয়েছিল। তাহলে কোরবানির মহত্ত্বের প্রধান অনুসঙ্গ যদি ভেড়া বা দুম্বা হয়ে থাকে তাহলে সেখানে গরু কেন কোরবানি হবে?
পাকভারত উপমহাদেশে ভেড়া পাওয়া যায়না এমন নয়। গরুর মতোই ভেড়াও সহজলভ্য। কিন্তু তারপরও কোরবানির প্রধান অনুসঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে গরু। কারণ গরুকে হিন্দুরা দেবতা জ্ঞানে পূজা করেন।
হিন্দুধর্মে ঐশ্বরিক ও প্রাকৃতিক উপকারের প্রতীক হিসাবে গরুকে ঈশ্বর জ্ঞানে পূজা করা হয়ে থাকে। হিন্দুরা গাছ, সাপকে পূজা করে থাকে। নদী সূর্যের প্রকৃতির অপার মহিমার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করে থাকে। কারণ প্রকৃতির জন্যই আমরা এই ধরাধামে বেঁচে আছি। আর এই প্রকৃতির প্রতিভূ হিসাবেই গবাদিপশুকেও হিন্দুরা পূজা করে থাকে। তাছাড়া হিন্দু দেবতা শিবের বাহন নন্দী বা ষাড়,ইন্দ্র কামধেনুর সাথে সম্পৃক্ত আর কৃষ্ণ যৌবনে গোপালক ছিলেন। গৃহস্থরা গরুকে সম্পদের প্রতীক হিসাবে বিবেচনা করেন। কৃষিকাজে মানুষের আহারের জোগান দেয় গরু। পরিপূর্ণ পুষ্টি হিসাবে গাভীর দুগ্ধের কোন বিকল্প নেই। তাছাড়া প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় গরুর ভূমিকা অনস্বীকার্য। তারপরও গরুকে কোরবানির প্রধান অনুসঙ্গ করার পিছনে প্রধান কারণ হলো কোন না কোন ভাবে হিন্দু ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করা। এর পিছনে ইসলামে সুনির্দিষ্ট কিছু বিধান রয়েছে যাকে কেন্দ্র করে হিন্দুদের পবিত্র স্থানে গরু জবাইয়ের মতো ঘটনা ঘটে থাকে।
পশু হত্যা করে ত্যাগের মহিমা প্রকাশ করা যায়না। ত্যাগ হলো আকাঙ্খা স্বেচ্ছায় ছেড়ে দেয়া। পশু হত্যা আসলে একটি প্রানীর জীবন কেড়ে নেয়া যা ত্যাগের সম্পূর্ন বিপরীত। আত্মত্যাগের নামে নিরিহ প্রানী হত্যা আধুনিক সভ্য সমাজে বর্বরতার সামিল।
ধর্মীয় বিধানের উপর আস্থা রেখে কোরবানির বিকল্প হিসাবে প্রতীকী কোরবানি হতে পারে যা এবার একটি মুসলিম দেশ মরক্কো দেখিয়ে দিয়েছে।
মরক্কোতে সাংবিধানিক ভাবে রাষ্ট্রীয় ধর্ম হিসাবে ইসলাম স্বীকৃত। এবার সেখানকার মুসলমানরা পশু কোরবানি ছাড়াই বকরি ঈদ পালন করেছে। কারণ দেশটি ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক দুর্দশা এবং কৃষি সংকটের কারনে রাষ্ট্রীয় নির্দেশে এই ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
কিন্তু রাষ্ট্রীয়ভাবে মরক্কো সরকার কোরবানির ধর্মীয় মর্যাদা রক্ষার জন্য সারাদেশের নাগরিকদের পক্ষ থেকে একটি ভেড়া কোরবানি দিয়ে সকল দেশবাসীর প্রতি উৎসর্গ করেছেন। এতে ধর্মের প্রতি সম্মান দেখানোর সাথে দেশের সার্বিক আর্থিক সামাজিক এবং প্রাকৃতিক ভারসাম্যও সামাল দেয়া গেলো।