নিজের তৈরী করে রেখে যাওয়া কবরে দাফন করা হলো না সাবেক যোগাযোগ মন্ত্রী আলহাজ¦ সৈয়দ আবুল হোসেনের। এমনকি তার মরদেহও আনা হয়নি মাদারীপুরের ডাসার উপজেলার নিজ পৈত্রিক ভিটায়। স্ত্রী ও দুই মেয়ের সিদ্ধান্তে তাকে আজ শুক্রবার (২৭ অক্টোবর) জুম্মা জানাজের পর জানাজা শেষে দাফন করা হয় তার শ^শুরবাড়ি সিরাজগঞ্জ জেলার এনায়েতপুরে।
এদিকে প্রিয় নেতা সৈয়দ আবুল হোসেনের মরদেহ এক নজর দেখার জন্য মাদারীপুরের ডাসার উপজেলার ডাসার এলাকার পৈত্রিক ভিটায় হাজার হাজার নেতা-কর্মীরা ভীর করেন। আজ শুক্রবার সকাল ১১টার দিকে ডাসারবাসী জানতে পারেন সৈয়দ আবুল হোসেনকে আর তার পৈত্রিক ভিটায় নিয়ে আসা হবে না। এই খবর মুর্হূতের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে বুকফাটা আর্তনাত আর কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন স্থানীয় নেতাকর্মীরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার বাদ জুম্মা মাদারীপুরের ডাসার উপজেলার তার নিজ প্রতিষ্ঠিত মসজিদে মাঠে সৈয়দ আবুল হোসেনের জানাজা হবার কথা ছিলো। তাই সকাল থেকেই নেতাকর্মীরা ডাসারে আবুল হোসেনের পৈত্রিক ভিটা ও মসজিদ মাঠে ভীর করতে থাকেন। হঠাৎ বেলা ১১টার দিকে তারা জানতে পারেন প্রিয় নেতার মরদেহ ডাসারে আসবে না। স্ত্রী খাজা নার্গিস হোসেন ও দুই মেয়ে সৈয়দা রুবাইয়াত হোসেন ও সৈয়দা ইফফাত হোসেনের সিদ্ধান্তে জানাজা শেষে তাকে দাফন করা হবে তার শ^শুরবাড়ি সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুরীতে। এমন খবরে বুকফাটা আর্তনাত, আর কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন হাজার হাজার নেতা-কর্মী-সমর্থকরা। বিশিষ্ঠ্য শিল্পপতি, শিক্ষানুরাগী , পদ্মা সেতু, ডাসার উপজেলার রুপকার, উন্নয়নের অগ্রদুধ, শিক্ষানুরাগী প্রিয় নেতার মরদেহ এক নজর দেখতে পারবেন না এই কষ্ট তারা কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না। এতে মাদারীপুর-৩ (মাদারীপুর সদর একাংশ-কালকিনি-ডাসার উপজেলা) আসনে শোকের ছায়া নেমে আসে। এদিকে প্রিয় নেতার মরদেহ ডাসারে আসবেন না শুনে এলাকাবাসী ও নেতা-কর্মীরা ডাসার উপজেলা চত্ত্বরে বিক্ষোভ করেছে।
খোজ নিয়ে আরো জানা যায়, সৈয়দ আবুল হোসেন নিজ হাতে গড়েছিলেন তার নিজের কবর। পাশে তৈরী করেছেন দৃষ্টিনন্দন মসজিদ। যাতে ব্যয় হয়েছে প্রায় ১২ কোটি টাকা। ৭ বছর আগে এই দুটি স্থাপনা তিনি তৈরি করেছেন।
ডাসার উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মো. আবুল খায়ের বলেন, সৈয়দ আবুল হোসেনের সাথে আমার ১৯৮৮ সাল থেকে পরিচয়। তিনি খুব ভালো মানুষ ছিলেন। তিনি প্রায় ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে পৈত্রিক ভিটায় একটি দৃষ্টিনন্দন মসজিদ ও নিজের হাতে কবর তৈরি করে রেখেছিলেন। তার স্বপ্ন ও ইচ্ছে ছিলো এই কবরে থাকার। কিন্তু তার পরিবার তা হতে দিলেন না। এটা খুবই দু:খজনক। আমরা কিছুইতে এটা মানতে পারছিনা।
কালকিনি উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, আমাদের প্রিয় নেতা সৈয়দ আবুল হোসেন তার পৈত্রিক ভিটার তার বাবা ও মায়ের কবরের পাশে নিজেই তার কবর তৈরি করেছিলেন। অনেক টাকা ব্যয় করে মাজারের মতো করে কবর তৈরি করেছিলেন। এমনকি কি টাইলস হবে, কি কাঠ হবে সব কিছু তিনি ঠিকাদারকে বলেও রেখেছিলেন। গত ছয় মাস ধরে কবরটির উন্নয়ন কাজও চলছিলো। অথচ তার স্ত্রী ও সন্তানরা তার শেষ ইচ্ছে পূরণ করলেন না। এমন দু:খজনক যে, তার মুখটিও এই ডাসার, কালকিনিবাসী একটিবারের জন্য দেখতেও পারলেন না। আমাদের হাজার হাজার নেতাকর্মীরা এই কষ্ট মেনে নিতে পারছিলেন না। তারা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েছেন। পরে ডাসারের শেখ হাসিনা উমেন্স কলেজে গায়েবী জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
সৈয়দ আবুল হোসেনের ছোট ভাই ডা. সৈয়দ আবুল হাসান বলেন, আমরা অনেক চেষ্টা করেছি আমার ভাই এর মরদেহ ডাসারে আনার জন্য। কিন্তু আমরা তা পারিনি। আমার ভাই এর স্ত্রী ও তার দুই মেয়ের স্বিদ্ধান্তমতে তাকে সিরাগঞ্জের এনায়েতপুরে দাফন করা হয়েছে।
কালকিনি উপজেলা চেয়ারম্যান মীর গোলাম ফারুক বলেন, আমরা বহু চেষ্টা করেও আমাদের প্রিয় নেতার মরদেহ ডাসারে আনতে পারিনি। আমাদের নেতা-কর্মীরা সৈয়দ আবুল হোসেনকে এক নজর দেখার জন্য অপেক্ষা করছিলো। কিন্তু তার স্ত্রী ও দুই মেয়ের স্বিদ্ধান্ত অনুযায়ী তার শশুরবাড়িতে দাফন করা হয়েছে।
এছাড়াও তিনি কালকিনি, ডাসার ও মাদারীপুর সদরে বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করে গেছেন। যার মধ্যে উল্লেখ্য যোগ্য হচ্ছে শেখ হাসিনা উমেন্স কলেজ, ডিকে আতাহার আলী কলেজ, খোয়াজপুর সৈয়দ আবুল হোসেন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, এবিসি সৈয়দ আবুল হোসেন কলেজ , খাসেরহাট স্কুল এন্ড কলেজ, কালকিনি সৈয়দ আবুল হোসেন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ প্রমুখ।
উল্লেখ্য, গত বুধবার দিবাগত রাত ২টা ৫ মিনিটে ঢাকার একটি বেসরকারী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান সৈয়দ আবুল হোসেন। ১৯৫১ সালে মাদারীপুরের ডাসারে বাবা সৈয়দ আতাহার আলী ও মা সৈয়দা সুফিয়া আলীর সংসারে জন্ম নেন আবুল হোসেন। ১৯৭৯ সালে খাজা নার্গিস হোসেনকে বিয়ে করেন তিনি। সৈয়দা রুবাইয়াত হোসেন ও সৈয়দা ইফফাত হোসেন এই দুই কন্যা থাকেন দেশের বাহিরে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের হয়ে মাদারীপুর-৩ আসন থেকে ১৯৯১ সালে পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আবুল হোসেন। এরপর তিনি সপ্তম, অষ্টম ও নবম সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এরমধ্যে তিনি ২০০৯ থেকে ২০১২ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকারের যোগাযোগ মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন তিনি।