ভ্রমনপ্রিয় মানুষদের পছন্দের তালিকায় পৃথিবীর ৬ মেঘাসিটির মধ্যে থাইল্যান্ড একটি। যুক্তরাষ্ট্র,যুক্তরাজ্য,কানাডা র পরেই এশিয়া মহাদেশের দেশগুলোর মধ্যে অর্থনৈতিক ও সার্বিক উন্নতির দিক থেকে প্রথম কাতারে আছে থাইল্যান্ড। বিশ্বের অন্যতম পর্যটনের শহর হিসাবে থাইল্যান্ডের স্থান অন্যতম।
থাইল্যান্ডের অন্যতম আকর্ষণ হলো তাদের নিজেদের সংস্কৃতি ও অতিথি আপ্যায়ন যা আপনাকে দেবে এক সুন্দর অভিজ্ঞতা। থাইল্যান্ডে ঘুরে দেখার মতো সমুদ্র সৈকত, পাহাড়, বৈচিত্র্যময় বন্যপ্রাণী এবং জাতীয় উদ্যান, প্রাণবন্ত ও ব্যস্ত শহর, সেরা কিছু স্ট্রীট ফুড সেইসঙ্গে দ্বীপও আছে উপভোগ করার মতো। থাইল্যান্ড হানিমুন স্পট হিসেবেও সুন্দর জায়গা।
থাইল্যান্ডের বৈচিত্র্যময় ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতি, পূর্ণিমা উদযাপন, সুন্দর সৈকত বিলাস, ভাসমান বাজার ছাড়াও আরও অনেক কিছু আছে দেখার মতো। থাইল্যান্ডের কয়েকটি সুপরিচিত এবং রোমাঞ্চকর পর্যটন স্থান রয়েছে যা থাইল্যান্ড ভ্রমণে গেলে অবশ্যই দেখা উচিত। নিচে থাইল্যান্ডের ৫টি সুপরিচিত এবং রোমাঞ্চকর পর্যটন স্থান রয়েছে। যা ভ্রমন করলে যেকোন পর্যটককেই আকর্ষণ করবে। ব্যাংকক হলো থাইল্যান্ডের রাজধানী, এটি থাইল্যান্ডের সবচেয়ে সুপরিচিত পর্যটন স্থানগুলোর মধ্যে একটি।
ঢাকা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ইউএস বাংলা বিমানে করে আকাশ পথে থাইল্যান্ডের সুবর্ণভূমি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যেতে লাগে ২ ঘন্টা ৫০ মিনিট। ঈদুল আযহার দিন সকাল ৯ টা ৫০ মিনিটের ফ্লাইটে আমরা রওনা হলাম। নবীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি উত্তম কুমার পাল হিমেলের নের্তৃত্ব এবং ঢাকা প্রিমিয়ার ট্যুর এন্ড কনসালটেন্ট ট্যাভেলের সত্ত্বাধিকারী অরুনোদয় ঘোষ অংশুর সার্বিক তত্ত্বাবধানে সফরে, সুজিত,সুকেশ,রসেন্দ্র,কানুসহ ৩ টি পরিবারের সদস্যরা মিলে মোট ১৪ জনের টীমটি ছিল পারিবারিক আনন্দদায়ক একটি ট্যুর টীম। একটি দেশেই মাত্র ৫ দিনের খুব কম সময়ের ভ্রমণটি ছিল অবিস্মরণীয় । গন্তব্য থাইল্যান্ডের সুবর্ণভূমি বিমানবন্দর। এ বিমানবন্দরকে বলা হয় পৃথিবীর অন্যতম সেরা একটি বিমানবন্দর। থাইল্যান্ড একমাত্র দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় রাষ্ট্র যা যুদ্ধকালীন সময় ব্যতীত কখনও কোন ইউরোপীয় বা বিদেশী শক্তির নিয়ন্ত্রণে ছিল না। ১৭৮২ সাল থেকে ১৯৩২ সাল পর্যন্ত দেশটিতে পরম রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত ছিল। ১৯৩২ সালে বিদ্রোহীরা একটি অভ্যুত্থান ঘটায় এবং দেশে সাংবিধানিক রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে। তখন থেকে আজ পর্যন্ত থাইল্যান্ড বহু সামরিক ও বেসামরিক সরকারের অধীনে শাসিত হয়েছে। ১৯৩৯ সাল পর্যন্ত দেশটি শ্যামদেশ (থাই সায়াম্) নামে পরিচিত ছিল। ঐ বছর এর নাম বদলে থাইল্যান্ড রাখা হয়। তবে ১৯৪০-এর দশকের শেষের দিকে আবারও একে শ্যামদেশ নামে ডাকা হত। ১৯৪৯ সালে দ্বিতীয়বারের মত থাইল্যান্ড নামটি গ্রহণ করা হয়।
থাইল্যান্ডের মধ্যভাগে রয়েছে একটি বিস্তীর্ণ উর্বর সমভূমি। এই সমভূমির মধ্য দিয়ে দেশের প্রধান নদী চাও ফ্রায়া এবং এর শাখানদী ও উপনদীগুলি প্রবাহিত হয়েছে। এই অঞ্চলে দেশের ধান ও অন্যান্য ফসলের অধিকাংশের আবাদ হয়। মধ্যভাগের সমভূমির পশ্চিম, উত্তর ও পূর্ব দিক ঘিরে রেখেছে পাহাড় ও মালভূমি। পশ্চিমের পর্বতশ্রেণী দক্ষিণ দিকে মালয় উপদ্বীপে প্রসারিত হয়েছে। থাইল্যান্ডের রাজধানী ও বৃহত্তম শহর ব্যাংকক চাও ফ্রায়া নদীর মোহনায় থাইল্যান্ড উপসাগরের তীরে অবস্থিত।
থাইল্যান্ডের জনসংখ্যার সংখ্যাগরিষ্ঠ থাই জাতির মানুষ। এরা প্রায় সবাই বৌদ্ধধর্ম পালন করে। থাইল্যান্ডে বসবাসকারী অন্যান্য জাতির মধ্যে আছে চীনা, মালয় ও আদিবাসী পাহাড়ি জাতি, যেমন মং ও কারেন। থাইল্যান্ডের পরিশীলিত ধ্রুপদী সঙ্গীত ও নৃত্য এবং লোকশিল্প বিখ্যাত। কৃষিপ্রধান দেশ হলেও ১৯৮০-র দশক থেকে থাইল্যান্ডের অর্থনীতির দ্রুত উন্নতি ঘটছে।
আকাশচুম্বী বৌদ্ধমন্দির, সোনালি বালুর সৈকত, চিরহরিৎ বনে মোড়ানো পাহাড়ি পথ, আর গ্রীষ্মময় দ্বীপের বুকে শান্ত সমুদ্রের ঢেউ—এ যেন এক স্বপ্নের দেশ। থাইল্যান্ড শুধু প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে নয়, বৈচিত্র্যপূর্ণ সংস্কৃতি, মুখরোচক খাবার আর উষ্ণ আতিথেয়তা মোহিত করে বিশ্বের লাখো পর্যটককে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে পর্যটকদের কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয় গন্তব্য থাইল্যান্ড। ভ্রমণবিষয়ক সাময়িকী ট্রাভেল অ্যান্ড লেজার অবলম্বনে ভ্রমণপ্রেমীদের জন্য এই লেখায় থাকছে থাইল্যান্ডের ব্যাংকক,পাতায়া,করাল আইল্যান্ড,ফুকেট,পাতায়া সীবিচ,আকাশচুম্বী বৌদ্ধ মন্দিরসহ অন্যান্য দর্শনীয় স্থানের বর্ণনা। বাংলাদেশে “লাভ ইন থাইল্যান্ড” নামের একটি চলচিত্রের ছবির স্যুটিং স্পষ্ট গুলো দেখে এতই ভাল লেগেছিল যে তখন থেকেই মূলত থাইল্যান্ড ভ্রমনের প্রবল ইচ্ছা জাগে। যা ২০২৬ সালে এসে পূর্ণতা পেয়েছে। ব্যাংকক একদিকে বিশাল আর আধুনিক, অন্যদিকে ঐতিহ্যে ভরপুর। ৫৫ লাখ মানুষের এই শহরে আপনি পাবেন চাও ফ্রায়া নদীর ধারে শান্তির ছোঁয়া, বৌদ্ধমন্দিরের মহিমা আর রাতের রাস্তায় বাহারি খাবারের স্বাদ। এই শহরের বড় দুটি আকর্ষণ হলো চাই ওয়াট অরুন ও ওয়াট ফ্রা কেও নামের দুটি বিখ্যাত মন্দির যেকোন পর্যটকদের নজর কাড়তে সক্ষম। থাইল্যান্ডের করাল আইল্যান্ডের মধ্য সাগরে স্পীডবোর্ড থেকে প্যারাসুট সাইক্লিংটি সত্যিই জীবনের এক নতুন অভিজ্ঞতা যোগ হয়েছে। থাইল্যান্ডের মুদ্রায় ৮ শত বাথ আর বাংলাদেশের টাকায় ৩ হাজার ২ শত টাকার ও উপরে ফি দিয়ে আমি ২ মিনিটের জন্য উঠে গেলাম আকাশে। ঘুড়ির মতো উন্নত কাপড় দিয়ে তৈরী ক্লিপ দিয়ে মোড়ানো রশি বেঁধে নিচ থেকে স্পিডবোটের সাথে বাধা থাকে। প্রায় ১০০০ থেকে ১২০০ ফুট উপরে উঠার ঝাঁকুনিটি প্রথমে একটু ভয় লাগলে ও খুবই আনন্দদায়ক। মনে হয় যেন ৩ মিনিটেই আকাশের কালো মেঘ ছুঁয়ে আসলাম। এছাড়া পাতায়া সীবিচেও হাজার হাজার পর্যটকরা সমুদ্র স্নানে মেতে উঠেন। যদিও সেটা বাংলাদেশের কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকতের চেয়ে অনেকটা ছোট। তবুও স্পিডবোটসহ সমুদ্র বিলাসের জন্য সব ধরনের বয়োজনই রয়েছে সেখানে। আর টাইগার পার্কটি তো শিশুদের জন্য রীতিমতো অসাধারণ একটি বিনোদন কেন্দ্র। যেখানে পুষ মানানো জীবন্ত বাঘ,সিংহ,হাতি,ভাল্লুকের সাথে ধরে ছবি তোলা যায়।
রাজধানী ব্যাককে অবস্থিত মেরিনা সাফারি ওয়াল্ড পার্কটি যেন আবালবৃদ্ধবনিতার জন্য পৃথিবীর একটি অন্যতম বিনোদন কেন্দ্র। যেখানে পঢ়াকেজের মাধ্যমে টিকিট কেটে প্রতিদিন বুফে দুপুরের খাবারসহ প্রায় প্রতিটি আধাঘন্টাব্যাপী এ্যালিফেন্ট শো,ডলফিন শো,সী লায়ন শো,ওয়ার শো দেখানো হয়। যা দেখে বিভিন্ন দেশের পর্যটকরা গানের ডালে তালে নেচে গেয়ে বিনোদনে মেতে উঠেন। এছাড়া এই সাফারি পার্কে খোলা অরন্যে বাঘ,সিংহ,হরিন,ভাল্লুক,জেব্রা, হাতি,জিরাফ,ক্যাঙ্গারু,বানর,মহি ষ,পাহাড়ি গরু,পাখিদের মধ্যে বক,হাস,টিয়াসহ বিভিন্ন প্রজাতির পশুপাখির অবাধ বিচরন দৃশ্য খুবই উপভোগ্য। যা বাংলাদেশের সুন্দরবনে ও দেখা যায় না।
অর্থনৈতিক দিক দিয়েও থাইল্যান্ড পৃথিবীর অন্যতম একটি দেশ। যার ফলে প্রচুর বাংলাদেশী মানুষ
থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংকক ও পাতায়াতে বিশেষ করে হোটেল ব্যবসায় বাংলাদেশী খাবারের হোটেল ব্যবসা করে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছেন। বিশেষ করে নোয়াখালী,চাঁদপুর ও কুমিল্লাসহ উত্তর বঙ্গের লোকজনই পাওয়া যায় বেশি। কথা হয় থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংকক সই থ্রি রোড সোকুমভিত এলাকার ষ্টার লাইন বাংলাদেশি খাবারের হোটেলে কর্মরত চাঁদপুরের আকরামের সাথে। তিনি জানান, বাংলাদেশীসহ বিভিন্ন দেশের পর্যটকদের মাঝে বাঙ্গালী খাবারের কদর অনেকটা বেশি। তাই এখানে এসে হোটেল ব্যবসায় ঢুকে এখন শেয়ারে কজন মিলে এ হোটেলে ব্যবসা করি। একজন শ্রমিক প্রায় ২০ হাজার বাথ এ এখানে হোটেলে চাকুরী করে যা বাংলাদেশের টাকার ৮০ হাজারেের ও উপরে। তাই বেশিরভাগ বাংলাদেশী শ্রমিকরা অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হতে থাইল্যান্ড,সিঙ্গাপুর,মালয়েশিয়া সহ দেশগুলোতে কাজের জন্য পাড়ি জমায়। এক কথায় প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন দেশ হিসাবে থাইল্যান্ড পৃথিবীর পর্যটন নগরী হিসাবে পরিপাটি।