ইরানের পিঠের পেছনেই দাঁড়িয়ে আছে পাকিস্তান। যে হরমুজ প্রণালী নিয়ে এত আলোচনা হয় তার মুখের ঠিক এক কোনায় দাঁড়িয়ে আছে পাকিস্তানের বেলুচিস্তান। বেলুচিস্তানের তিন অংশের দখল যথাক্রমে ইরান, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের কাছে। ইরান যখন পারস্য সাম্রাজ্য ছিল তখন বেলুচিস্তানের বেশকিছু অঞ্চল দখর করে নিয়েছিল যুদ্ধের মাধ্যমে। আফগানিস্তানে বেলুচিস্তানের যে অংশটি ছিল তা দখল করে নিয়েছিল মোঘলরা। পাকিস্তানের বেলুচিস্তান অংশটি ছিল ব্রিটিশদের হাতে। এইভাবেই বেলুচ উপজাতিদের বেলুচিস্তান বিভিন্ন যুদ্ধের মাধ্যমে তিন টুকরো হয়েছে। ইরানে বেলুচিস্তানের যে অংশটি রয়েছে তা চিস্তান ও বেলুচিস্তান নামে পরিচিত। এই বেলুচিস্তান নিয়েই ইরানের সাথে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের সীমানা। ইরানকে আমেরিকার আক্রমণ করতে হলে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের আকাশ সীমা ব্যাবহার করতে হয়। বর্তমানে যেহেতু আফগানিস্তানে আমেরিকার কোন সামরিক ঘাঁটি নেই সেক্ষেত্রে আফগান যুদ্ধে আমেরিকা যেভাবে পাকিস্তানকে ব্যবহার করেছিল ইরান যুদ্ধেও ঠিক একইভাবে পাকিস্তানকে ব্যবহার করেছে। ইরানে আমেরিকার হামলার কয়েকদিন আগে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিফ মুনীরের ট্রাম্পের সাথে ” কাউয়া ভোজন” দেখেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল ইরানে কী হতে যাচ্ছে।।
ইরানের সাথে সীমান্তে আছে তুরস্ক, ইরাক, আজারবাইজান, তুর্কেমেনিস্তান, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, আর্মেনিয়া। শুধুমাত্র ওমানের সাথেই আছে ইরানের সমুদ্র সীমা। ইরানের মানুষ আইডোলিজিকালি টাকার কাছে কখনোই বিক্রি হয় না।তাই এক্ষেত্রে আমেরিকার প্রথম পছন্দ ছিল পাকিস্তান। পাকিস্তান পৃথিবীতে এমন একটি দেশ, যেই দেশ টাকা দিলেই শুয়ে যায়। ইরানের পারমাণবিক কার্যক্রম সম্পর্কে পাকিস্তান অবহিত ছিলো। ইসরায়েল ও হামাস যুদ্ধের দামামা থেকেই পাকিস্তানের সাথে গভীর সম্পর্ক রেখে গেছে ইরান। ভারতের পেহেলগাম হত্যাকাণ্ড ও হামাস নেতার আজাদ কাশ্মীর সফরে লস্কর -ই-তৈয়বার সাথে মিটিং যেন একটি গল্পের রহস্যময় অধ্যায়।যে আমেরিকা কিছুদিন আগেও ভারতের খুব কাছের বন্ধু ছিল তারাই ভারত ও পাকিস্তান যুদ্ধে হঠাৎ করে মোড় পরিবর্তন করে পাকিস্তানের দিকে ঝুঁকে গেল।যে সময় ভারত ও পাকিস্তান যুদ্ধ চলছে সেই সময়টাই ইরান আক্রমণের পরিকল্পনা করছিলো আমেরিকা ও ইসরায়েল। হঠাৎ ৩৭ মাস পর বিশ্বব্যাংক থেকে পাকিস্তানের জন্য ১.৭ বিলিয়ন ডলার ছাড় ও আসিফ মুনীরের কাঁধে ডোনাল্ড ট্রাম্পের হাত, এবং সর্বশেষ ভারত ও পাকিস্তান যুদ্ধের সিজ ফায়ার। রহস্যময় অধ্যায়ের শুরুর পরীক্ষামূলক টেস্টের শুরুটা এখান থেকেই মনে হচ্ছে।।
ইরান যেহেতু পরমাণু বোমা তৈরি করতে পারেনি সেহেতু ইরানের ভরসার অন্যতম জায়গা ছিল পাকিস্তান। ভারত পাকিস্তান যুদ্ধে ইরান পাকিস্তানের পাশে দাঁড়ালেও ইরানের পাশে মুখে বকবক ছাড়া সেভাবে পাকিস্তানকে দাঁড়াতে দেখা যায়নি। আমেরিকা যেভাবে ইসরায়েলকে আকাশ প্রতিরোধ ব্যবস্থা দিয়ে সহায়তা করেছে পাকিস্তান ও তুরস্কও পারতো সেভাবে ইরানের পাশে দাঁড়াতে, কিন্তু দাঁড়ায়নি।অতীতে হামাস ও হিজবুল্লাহ এর সাথে ইসরায়েলের যুদ্ধে তুরস্ক ও পাকিস্তানকে মুখে বড় বড় বুলি আওড়াতে গেলেও সেভাবে তাদের পাশে দাঁড়াতে দেখা যায়নি। আমেরিকার ” অপারেশন মিডনাইট হ্যামার” এর সাথে মুখে মধু আর অন্তরে বিষ নিয়ে এইভাবেই ইরানের পিঠের পেছনে ছুরি হাতে দাঁড়িয়েছিল পাকিস্তান।। ইরান বুঝতেও পারেনি কীভাবে তলে তলে তাদের ক্ষতিটা হয়ে গেল।বন্ধুই যখন পিঠের পেছনে ছুরি হাতে দাঁড়িয়ে থাকে তখন ইরান বিশ্বাস করবে কাকে?
পাকিস্তান একটি সুন্নী রাষ্ট্র এবং ইরান হচ্ছে শিয়া রাষ্ট্র ।
১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকেই পাকিস্তানে শিয়া ও সুন্নি বিরোধ তুঙ্গে। ১৯৫০ সালের পর থেকেই পাকিস্তানে শিয়া ও সুন্নি মুসলমানদের বিরোধ তুঙ্গে। পাকিস্তান এই বিভেদের জন্য প্রায় সময় ইরানকে দায়ী করে থাকে। পঞ্চাশের দশকে ইরানে হাজার হাজার শিয়া হত্যা করা হয়। ২০১১ সালেও পাকিস্তানে শিয়া ও সুন্নি বিরোধের জেরে ২০০০ শিয়া মুসলমানকে হত্যা করা হয়।এই পর্যন্ত পাকিস্তানে প্রায় দশ হাজার শিয়া মুসলমানদের হত্যা করা হয় পাকিস্তানে। গত ৭৮ বছর ধরে পাকিস্তানে শিয়া ও সুন্নি মসজিদে বোমার বিস্ফোরণ নিয়মিত ঘটছে। এতে আহত মুসলমানদের সংখ্যাও প্রায় ২০ হাজারের উপরে। ইরান শিয়া অধ্যুষিত হওয়ায় পাকিস্তান সৌদিআরবের পাশে থাকলেও ইরানের সাথে পাকিস্তানের ছিল অদৃশ্য শত্রুতা। এমনকি ইরানের প্রক্সি ইয়ামেনের হুথিদের সাথে সৌদির যুদ্ধেও পাকিস্তান ইরানের বিপক্ষে গিয়ে সৌদি আরবের পক্ষে দাঁড়িয়েছিল। সৌদিআরব ও পাকিস্তান দীর্ঘ সময় ধরেই আমেরিকার সবচেয়ে প্রমাণিত কাছের বন্ধু। একমাত্র ইরান সাহস করে দীর্ঘ সময় ধরে আমেরিকার বিরুদ্ধে সাহসের সাথে দাঁড়িয়েছিল। তাদের পিঠের পেছনেই ছুরি হাতে দাঁড়িয়েছিল অদৃশ্য শত্রু পাকিস্তান।
পাকিস্তানে শুধু শিয়া মুসলমানরাই পাকিস্তানের শত্রু এমন নয়। দীর্ঘ সময় ধরে পাকিস্তানে কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের মুসলমানদের হত্যা অব্যাহত আছে। ১৯৭৯ সালে স্টিভেন ওয়াইনভার্গ এবং শেন্ডন লি গ্ল্যাশোর সাথে যৌথভাবে নোবেল পুরস্কার পাওয়া পদার্থবিজ্ঞানী আব্দুস সালামকে পাকিস্তান ছেড়ে চলে যেতে হয়েছিল আহমদিয়া বা কাদিয়ানি মুসলমান হওয়ার কারণে। ১৯৭৪ সাল থেকেই পাকিস্তানে আহমদিয়া মুসলমানদের অমুসলিম ঘোষণা করা হয়। তাঁর ৪৯ বছর আগে আলোর বিক্ষেপন ও ‘রামন প্রভাব’ এর জন্য একই পদার্থবিদ্যায় নোবেল পাওয়া বিজ্ঞানী স্যার সিভি রমনকে কিন্তু ভারত ছাড়তে হয়নি। আমেরিকা ও আফগানিস্তান যুদ্ধেও ভারত তার মাটিকে আমেরিকাকে ব্যবহার করতে না দিলেও পাকিস্তান দিয়েছিল। আমেরিকার আঙ্গুলের ইশারায় আফগানিস্তানে তালিবান ও আল কায়দা সৃষ্টি করে পাকিস্তান সারাবিশ্বে মুসলমানদের জ-ঙ্গী ও সন্ত্রাসী পরিচয় এনে দিয়েছিলো। পাকিস্তান তার নিজ ভাই আফগান মুসলমানদের গোশত খেতে এক মিনিটও দেরী করেনি সেখানে ইরানতো হচ্ছে বহু দূরের সৎ ভাই।।