সাতক্ষীরা প্রতিনিধিঃ সাতক্ষীরায় চাঞ্চল্যকর গৌতম হত্যা মামলায় জড়িতদের ধরতে পুলিশ গড়িমসি করছে বলে অভিযোগ করেছেন তাঁর বাবা ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্য গণেশ চন্দ্র সরকার। তিনি বলেছেন, পুলিশ রহস্যজনক ভূমিকা পালন করছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেন গণেশ চন্দ্র সরকার।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সাতক্ষীরা সদরের ঘোনা ইউপি চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ ফজলুর রহমান, সদস্য (মেম্বার) রাবেয়া পারভীন, তাসলিমা খাতুন, নাজমিরা খাতুন, স্বপন ঘোষ, ভৈরব চন্দ্র, মোত্তাসিম বিল্লাহ নয়ন প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে গণেশ অভিযোগ করে বলেন, তাঁর এলাকা ঘোনা ইউনিয়নের মহাদেবনগর গ্রামের নূর মোহাম্মদ মুক্ত, কবিরুল ইসলাম মিঠু, জামশেদ, সাজু হোসেনসহ কয়েক যুবক চাঁদাবাজি করত। এ ছাড়া বিভিন্ন ধরনের সন্ত্রাস ছাড়াও নানা অপরাধ করত তারা। অনেক দিন ধরেই তিনি এর প্রতিবাদ করে আসছিলেন।
গত ১০ ডিসেম্বর পুলিশ চাঁদাবাজ জামশেদকে ধরে নিয়ে যায়। আটক ব্যক্তিদের ছাড়ানোর ব্যাপারে তাঁর কাছে সহযোগিতা চাওয়া হয়। তবে তিনি রাজি হননি। ১৩ ডিসেম্বর সাতক্ষীরা থানা থেকে জামশেদ মুক্তি পায়। বাড়ি ফিরেই জামশেদ তাঁকে মোবাইল ফোনে হুমকি দেয়।
গণেশ জানান, ১৩ ডিসেম্বর রাতেই তাঁর ছেলে মাহমুদপুর সীমান্ত কলেজের ছাত্র গৌতম সরকারকে সন্ত্রাসীরা টেলিফোনে ডেকে নিয়ে অপহরণ করে। পরদিন সকালে তার মুক্তির জন্য ১০ লাখ টাকা চাওয়া হয়। এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন তিনি। পরে মুক্তিপণের টাকা নিতে এলে শাহাদাত ও আলী আহমেদ শাওনকে আটক করে পুলিশ। তাঁদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী পরে সাজু হোসেনকে কোমরপুর গেট থেকে এবং নাজমুল হোসেনকে কালীগঞ্জের পাইকাড়া গ্রাম থেকে আটক করা হয়।
লিখিত বক্তব্যে পুলিশের প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকার কথা উল্লেখ করেন গণেশ। তিনি বলেন, সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি-তদন্ত) আলমগীর কবির ও উপপরিদর্শক (এসআই) আসাদুজ্জামান এজাহার থেকে জামশেদের নাম বাদ দেওয়ার চেষ্টা করছেন। আসামিদের কাছ থেকে ১৬১ ধারায় স্বীকারোক্তি পাওয়ার পর পুলিশ ইচ্ছামতো ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি আদায় করেছে।
গণেশ সরকার জানান, সন্ত্রাসীরা ১০ লাখ টাকার বিনিময়ে গৌতমকে ছেড়ে দেওয়ার কথা মোবাইল ফোনে জানিয়েছিল। ফোনে কথা বলার সময় তা রেকর্ড করেন তিনি। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) সার্কেল আতিকুল ইসলাম, ওসি ফিরোজ হোসেন মোল্লাসহ সব কর্মকর্তাকে ওই রেকর্ড করা কথা শোনানো হয়।
গণেশ বলেন, ‘১০ লাখ টাকা দাবির বিষয়টি রেকর্ডে শোনার পরও সাতক্ষীরার এসপি কীভাবে বলেন যে গৌতমকে মাত্র ৫০ হাজার টাকার জন্য খুন করা হয়েছে? অভিযুক্ত নাজমুল পুলিশ ও ম্যাজিস্ট্রেটকে জানিয়েছে যে শাহাদাত গৌতমকে খুন করে? এসব জানার পরও পুলিশ সুপার আলতাফ হোসেন কীভাবে বললেন যে হাত-পা বাঁধা ও মুখে গুলের কোটা রাখা গৌতম গড়াতে গড়াতে পুকুরে পড়ে পানিতে ডুবে মারা গেছে? এটা কি বোঝায় না যে পুলিশ এই হত্যার ঘটনাকে ভিন্ন দিকে নিয়ে যাচ্ছে এবং আসামিদের রক্ষার চেষ্টা করছে?’
গত ১৩ ডিসেম্বর সাতক্ষীরার মাহমুদপুর সীমান্ত কলেজের স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র গৌতম সরকার অপহৃত হন। পরে তাঁর পা বেঁধে ও মুখে গুলের কৌটা গুঁজে দিয়ে তাঁকে হত্যা করা হয়। পরে লাশ মহাদেবনগরের একটি পুকুরে ফেলে রাখা। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত শাহাদাত, নাজমুল, সাজু হোসেন, আলী আহমেদ শাওন, মহসিন কবির ও ফজিলা খাতুনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে শাহাদাত ও নাজমুল হত্যার দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে।