ঈদ ঘনিয়ে এলেই সালামি হিসেবে নতুন চকচকে টাকার চাহিদা থাকে তুঙ্গে। তাই ব্যাপক চাহিদা ও ঈদের আনন্দকে বাড়িয়ে দিতেই প্রতিবছর ঈদের আগে বাজারে নতুন টাকার নোট ছাড়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে এবার ঘোষণা দিয়েও নতুন নোট ছাড়ার সিদ্ধান্ত বাতিল করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতেই চড়েছে নতুন নোটের বাজার।
রাজধানীর মতিঝিল ও গুলিস্তানের নতুন টাকার দোকান সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, নতুন নোটের দেখা নেই বললেই চলে। অল্পকিছু নতুন নোট বসেছেন ব্যবসায়ীরা। দরদাম করছেন ক্রেতারাও। তবে দাম তুলনামূলক বেশি হওয়ায় বেচাকেনাও কম।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, প্রতিবছর ঈদে বাংলাদেশ ব্যাংক নতুন নোট ছাড়লেও এবার সিদ্ধান্ত বদলেছে। তাই নতুন নোটের সরবরাহ নেই। হাতে থাকা সীমিত নোট দিয়েই বেচাকেনা চলছে। এতে দাম বেড়ে গেছে। নতুন নোট না ছাড়লে ঈদের আগে দাম আরও বাড়তে পারে।
মতিঝিলের বাংলাদেশ ব্যাংকের বাইরে নতুন নোট বিক্রি করা এক নারী সময় সংবাদকে জানান, নতুন নোট না পাওয়ায় সরবরাহ কম। এই সুযোগে দাম বাড়িয়ে দিয়েছে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। ফলে বাড়তি দাম হওয়ায় ক্রেতারা দরদাম করে চলে যাচ্ছেন।
তিনি আরও বলেন, সবচেয়ে বেশি চাহিদা ১০, ২০ ও ৫০ টাকার নতুন নোটের। এবার প্রতি বান্ডিলে গতবারের তুলনায় ২০০-৩০০ টাকা পর্যন্ত বেশি পড়ছে। গতবার ঈদের আগের ১০ টাকার নোটের বান্ডিল (১ হাজার টাকা) ১২০০-১২৫০ টাকা বিক্রি হলেও এবার ১৫ রোজার আগেই সেটি বিক্রি হচ্ছে ১৪৫০ টাকায়।
এছাড়া ২ টাকার ১ বান্ডিল (২০০ টাকা) নতুন নোট বিক্রি হচ্ছে ১৫০-১৮০ টাকায়। ৫ টাকার এক বান্ডিল (৫০০ টাকা) বিক্রি হচ্ছে ৬৫০ থেকে ৬৭০ টাকায়। ২০ টাকা এক বান্ডিল (২ হাজার টাকা) ১৪৫০-১৫০০ টাকা, ৫০ টাকার এক বান্ডিল (৫ হাজার টাকা) ৫৩০০ টাকা ও ১০০ টাকার এক বান্ডিল (১০ হাজার টাকা) নোট বিক্রি হচ্ছে ১০৩০০ টাকায়।
ক্রেতারা বলছেন, এবার ব্যাংক থেকে নতুন নোট ছাড়া হবে না। তাই ঝোপ বুঝে কোপ মারছেন ব্যবসায়ীরা। রাজধানীর মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংকের বাইরের অস্থায়ী দোকানে নতুন নোট কিনতে আসা জুনায়েদ বলেন, প্রতিবছর নতুন নোট এমনিতেই বাড়তি দামে কিনতে হয়। এবার সেটি আরও বেশি চাচ্ছে।
আরেক ক্রেতা রমিজ বলেন, ঈদে ছোটরা সালামি হিসেবে নতুন নোটের আশায় থাকে। তবে এবার নতুন নোটের বাজার এখনই যেভাবে চড়েছে, চাঁদরাতে কি হবে কে জানে। তাই আগেভাগেই কিনে রাখছি। তবু হাজারে ৪০০-৫০০ টাকা বেশি গুনতে হচ্ছে।
এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, ঈদুল ফিতর উপলক্ষে আগামী ১৯ মার্চ থেকে নতুন নোট ছাড়ার কথা থাকলেও সেটি স্থগিত করা হয়েছে। এবার ৫, ২০ ও ৫০ টাকার নতুন নোট ছাড়া কথা ছিল।
এক বিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, আসন্ন পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে জনসাধারণের মধ্যে নতুন নোট বিনিময় কার্যক্রম বন্ধ রাখার জন্য পরামর্শ দেয়া হলো। পাশাপাশি ব্যাংকের শাখায় যে নতুন নোট গচ্ছিত রয়েছে, তা বিনিময় না করে সংশ্লিষ্ট শাখায় সংরক্ষণ করার জন্য বলা হলো। চিঠিতে পুনঃপ্রচলনযোগ্য নোট দ্বারা সব নগদ লেনদেন কার্যক্রম সম্পাদনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
তবে কি কারণে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে তা নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক বিজ্ঞপ্তিতে না জানালেও গুঞ্জন রয়েছে, টাকায় শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি থাকায় কয়েকটি পক্ষ থেকে আপত্তি উঠেছে। এমন পরিস্থিতিতে ঈদ সামনে রেখে নতুন নোট বিতরণ কার্যক্রম স্থগিত রাখা হয়েছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান সময় সংবাদকে বলেন, খুব শিগগিরই বাজারে আসছে নতুন ডিজাইনের নোট। মে মাসে শেষ নাগাদ বাজারে আসতে পারে নতুন ডিজাইনের নোট। তাই এখন ফ্রেশ নোট বাজারে ছাড়লে নতুন নোট বাজারে আসা বিলম্বিত হবে।
এবারের ঈদে নতুন না মেলার প্রসঙ্গে মুখপাত্র আরও বলেন, এবার ঈদে নতুন নোট বিনিময় করা হবে না। বাজারে প্রচলিত নোটগুলো ব্যবহার অব্যাহত থাকবে। ফলে এবার কেউই পাচ্ছেন না নতুন নোট। পুলিশ, সাংবাদিক, চাকরিজীবী; এমনকি ব্যাংক কর্মকর্তারাও পাবেন না। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা প্রতি বছর নতুন নোট পায়। এবার আমরাও সেটা পাব না।
গত ৮ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের বোর্ড সভায় নতুন ডিজাইনের নতুন নোট প্রচলনের সিদ্ধান্ত অনুমোদিত হয়েছিল। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ২০, ১০০, ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোটের ডিজাইন পরিবর্তন করা হবে। যা নিয়ে কাজ করছে সরকার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশ্বস্ত সূত্র জানিয়েছে, নতুন নোটে থাকবে না শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি। নতুন করে যুক্ত হবে ধর্মীয় স্থাপনা, বাঙালি ঐতিহ্যসহ ‘জুলাই বিপ্লবের গ্রাফিতি’।