একুশে পদকপ্রাপ্ত স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অন্যতম সংগীতযোদ্ধা, সুরকার-সংগীত পরিচালক সুজেয় শ্যাম পরলোক গমন করেছেন(ওঁ দিব্যান লোকান্ স গচ্ছতু) । মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৮ বছর।
বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) দিনগত রাত ৩টার দিকে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন তিনি।
তার মৃত্যুর সংবাদ গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন সুজেয় শ্যামের ভাতিজা সুমিত শ্যাম পল।
সুজেয় শ্যাম ১৯৪৬ সালের ১৪ মার্চ তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের সিলেট জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা অমরেন্দ্র চন্দ্র শাহ ছিলেন ‘ইন্দ্রেশর-টি’ নামের একটি চা বাগানের মালিক। তার শৈশব কেটেছে সিলেটের চা বাগানে। দশ ভাইবোনের মধ্যে সুজেয় ছিলেন ষষ্ঠ।
সংগীতে অবদানের জন্যে তিনি ২০১৮ সালে একুশে পদক এবং এর আগে ২০১৫ সালে পান শিল্পকলা পদক।
স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শেষ গান এবং পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের পর প্রথম গানটির সুর করেছিলেন সুজেয় শ্যাম। গীতিকার শহীদুল আমিনের লেখা ‘বিজয় নিশান উড়ছে ওই’ গানটির সুর ও সংগীত পরিচালনা করেন তিনি। গানটির প্রধান কণ্ঠশিল্পী ছিলেন অজিত রায়। সুজেয় শ্যামের সুর করা গানগুলোর মধ্যে ‘রক্ত দিয়ে নাম লিখেছি’, ‘রক্ত চাই রক্ত চাই’, ‘আহা ধন্য আমার জন্মভূমি’ উল্লেখযোগ্য।
জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত এই সংগীত পরিচালক দীর্ঘদিন ধরে শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছিলেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) তিনি প্রায় চার মাস ধরে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
সুজেয় শ্যাম বললেন, ‘সুস্থ-সুন্দর-সংগীতময় একটা জীবন কাটছিল। ভেবেছিলাম এভাবেই হয়তো সুন্দর পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে পারবো। কিন্তু কখনও যে ক্যানসারের মতো অসুখে আক্রান্ত হবো তা ভাবিনি।’
তিনি দুরারোগ্য ক্যানসারে ভুগছিলেন। এই রোগের চিকিৎসা ব্যয় অনেক বেশি উল্লেখ করে তিনি বলেছিলেন, ভেবেছিলাম এভাবেই হয়তো সুন্দর পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে পারবো। কিন্তু কখনও যে ক্যানসারের মতো অসুখে আক্রান্ত হবো তা ভাবিনি।’
তিনি আরও বলেছিলেন, ‘আর্থিকভাবে খুব সচ্ছল নই আমি। অর্থের পেছনে কখনও ছুটিনি। যে কারণে এই ব্যয়বহুল চিকিৎসা আমার জন্য অনেক কষ্ট হয়ে যাবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যদি আমার এই চিকিৎসার জন্য পাশে দাঁড়ান তাহলে হয়তো তার সহায়তা আর বিধাতার কৃপায় এই রোগ থেকে মুক্তি লাভ করতে পারবো। আমার জন্য প্রার্থনা করবেন সবাই।’