স্টাফ রিপোর্টারঃ মাত্রই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতে এসেছে দল। প্রথম কোনো দল হিসেবে দ্বিতীয়বারের মতো ট্রফিটা ঘরে নিয়ে এল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এই সময়ে অনেক পুরস্কার, সম্মান, প্রশংসায় ভেসে যাওয়ার কথা ক্যারিবীয় ক্রিকেটারদের। অথচ এই মধুর সময়েও স্যামি-গেইল-ব্রাভোদের কিনা ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট বোর্ডের (ডব্লুআইসিবি) সঙ্গে বেতন নিয়ে বচসা করতে হচ্ছে!
বিশ্বকাপ জয়ের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় ডব্লুআইসিবি ও এর সভাপতি ডেভিড ক্যামেরনের আচরণে নিজের হতাশা জানিয়েছিলেন ক্যারিবীয় অধিনায়ক ড্যারেন স্যামি। এ নিয়ে খেলোয়াড়-বোর্ডে একটু লেগেই ছিল। এবার ডোয়াইন ব্রাভোও একহাত নিলেন বোর্ড ও বোর্ড সভাপতিকে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ অলরাউন্ডারের চোখে ডব্লুআইসিবি ‘বিশ্বের সবচেয়ে অপেশাদার’, আর বোর্ডের সভাপতি ক্যামেরন একজন ‘অপরিপক্ব’, ‘উদ্ধত’ ও ‘সংকীর্ণমনা’ ব্যক্তি।
ইংল্যান্ডের সঙ্গে রুদ্ধশ্বাস ফাইনালে জয়ের পর বোর্ডের কোনো ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছ থেকে অভিনন্দন না পাওয়ায় নিজের বিরক্তি জানিয়েছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক স্যামি। টুর্নামেন্টজুড়ে খেলোয়াড়দের প্রয়োজনীয় জার্সি দিতে না পারার ব্যর্থতা ও বেতন নিয়ে ঝামেলাকে অযথা দীর্ঘায়িত করায় ‘বোর্ড খেলোয়াড়দের প্রাপ্য সম্মান দিচ্ছে না’ বলেও জানিয়েছিলেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার ত্রিনিদাদের এক টিভিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ব্রাভোও সুর মেলালেন স্যামির সঙ্গে, ‘বোর্ড সভাপতি একজন অপরিপক্ব ও ছোট মনের মানুষ। আসলে বেশ উদ্ধতও। অনেক মানুষই জানে না, খেলোয়াড় হয়েও আমাদের বোর্ডের সঙ্গে কেমন ঝামেলার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। আমার মনে হয়, এটা আসলে বিশ্বের সবচেয়ে অপেশাদার বোর্ড!’
বিশ্বকাপের আগে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলার সময়ও ক্যারিবীয় খেলোয়াড়দের জার্সির পেছনে নাম-নম্বর লেখা ছিল না। এই বিষয়গুলো মনে করিয়ে দিয়ে ব্রাভো বললেন, ‘আমরা ভারত গেলাম, অথচ আমাদের জার্সিতে নামও লেখা ছিল না। আমাদের ম্যানেজার দলের ক্যাম্প ছেড়ে ভারত গিয়ে জার্সিতে খেলোয়াড়দের নাম ও নম্বর লিখিয়ে নিয়ে এলেন। পুরো টুর্নামেন্টে আমাদের মাথায় কোনো ক্যাপ ছিল না।’
ক্যারিবীয় খেলোয়াড়দের নিয়ে সবচেয়ে প্রচলিত অভিযোগ, তাঁরা বিশ্বজুড়ে ফ্র্যাঞ্চাইজি টি-টোয়েন্টি লিগে খেলে টাকা কামাতে চান, অথচ ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের ব্যাপারে অত ‘সিরিয়াস’ নন। কয়েক দিন আগে উইন্ডিজ বোর্ড সভাপতি ক্যামেরন স্যামির কথার পাল্টা সমালোচনা করে বলেছিলেন, ‘ও বলে বোর্ডের কাছ থেকে ভালো বেতন পায় না। অথচ সিপিএল (ক্যারিবীয় টি-২০ লিগ) কে তৈরি করেছে?
ও এই বছরও সিপিএল থেকে প্রায় ১ লাখ ৬০ হাজার ডলার পাবে। আপনি বিশ্বজুড়ে সব জায়গায় লিগে খেলে বেড়াবেন, ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে শুধু টি-২০ খেলবেন, তবু মূল চুক্তিতে থাকার আশা কীভাবে করেন?’
তবে ব্রাভো সেটি মানতে রাজি নন, ‘সবাই ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিকেটের প্রতি আমাদের নিবেদন নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। কিন্তু তাঁরা বিষয়টা বুঝতে পারছেন না। চুক্তি নিয়ে সব সময়ই বোর্ডের সঙ্গে আমাদের ঝামেলা ছিল, কিন্তু বোর্ড খেলোয়াড়দের সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা করতে রাজি নয়।
তারা বরং ডব্লুআইপিএর (খেলোয়াড়দের অ্যাসোসিয়েশন) সঙ্গে আলোচনা করে। অথচ ভারতে খেলতে যাওয়া ১৫ জন খেলোয়াড়ের মধ্যে মাত্র ১ জন অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে যুক্ত।’
বোর্ডের কাজে অসন্তুষ্ট ব্রাভোর শঙ্কা, জল আরও ঘোলা হবে, ‘বোর্ড সব সময় বলে, আমরা খেলোয়াড়েরা লোভী, আমরা ভুল করছি। অথচ বেতন আমাদেরই কাটা যাচ্ছে। আমরা প্রাপ্য সম্মানটুকু চাই। বেশ কঠিন সময় যাচ্ছে, এটা আরও কঠিন হবে। বোর্ড এখন আর ঘৃণা আর রাগ নিয়েই এগুলোর উত্তর দেবে।