বেঙ্গালুরুর চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দুইটি ম্যাচ হয়েছে। সেখানে কারা আলো ছড়িয়েছেন খেয়াল করেছেন? অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডাম জামপা যেমন কাল ৩ উইকেট নিয়ে ম্যাচ-সেরা। আগের দিন ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্যামুয়েল বদ্রিও নিয়েছিলেন ৩ উইকেট। শ্রীলঙ্কার মাইকেল ভ্যান্ডারসে ১ উইকেট নিলেও ৪ ওভারে দিয়েছেন মাত্র ১১ রান। এই তিনজনের মিল কী বলুন তো ? তিনজনই লেগ স্পিনার।
বাংলাদেশের দলে যিনি এঁদের সঙ্গী হতে পারতেন, সেই জুবায়ের হোসেন নিজেকে হারিয়ে খুঁজছেন। স্পিন দিয়েই বাংলাদেশের বধ করার কথা প্রতিপক্ষকে, বাংলাদেশের কাছে সেই ঘূর্ণিজাল এখন দুর্বোধ্য একটা ধাঁধা।
বাংলাদেশের বোলিংয়ের মূল শক্তি এখন পেস। এই উপমহাদেশের দল হয়েও বাংলাদেশ চার পেসার নিয়ে খেলার সাহস দেখায়। একের পর এক পেসার উঠে আসছে। নিঃসন্দেহে সুখবর। কিন্তু একটি পেতে গিয়ে আরেকটিকে হারিয়ে ফেলাও হয়তো ঠিক হয়নি। বিশ্বকাপ যখন ভারতের মাটিতে, যেখানে উইকেট বানানো হচ্ছে স্পিনের বিষ ছড়িয়ে; এক সময় যে স্পিনার ছিল বাংলাদেশের মূল শক্তি, এখন সেই স্পিনার নিয়েই যেন হাহাকার!
ভরসা করার মতো আরেকজন স্পিনার থাকলে কী হতো, সেটার কিছুটা আভাস গতকাল সাকিব আল হাসান নিজেই দিয়েছেন। ৩ উইকেট নিয়ে অস্ট্রেলিয়াকে কাঁপিয়েই দিয়েছিলেন। সাকলাইন সজীব আর শুভাগত হোমরা একটু সমর্থন দিতে পারলে হয়তো অনেক কিছুই অন্যরকম হতে পারত। দুজনেই অবশ্য এক দিনের মধ্যে উড়ে এসেছেন ভারতে, পরিস্থিতির শিকার হয়ে হুট করেই নামতে হয়েছে মাঠে। কিন্তু সামনের ম্যাচে এক সাকিব ছাড়া বাংলাদেশ স্পিনে ভরসা করবে কার ওপর? বিশেষ করে কালকের ম্যাচটা যখন সেই ভারতের বিপক্ষে সেই বেঙ্গালুরুতেই।
পেস বোলিং যে বাংলাদেশের বড় শক্তি, সেটা অস্বীকার করার উপায় নেই। গত এক বছরে বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি উইকেটের তালিকায় পেসারদেরই জয়জয়কার। ওয়ানডে তো বটে, টি-টোয়েন্টিতেও তা-ই। ২৩ উইকেট নিয়ে আল আমিনই সবার ওপরে। ২০ উইকেট নিয়ে সাকিব অবশ্য এর পরেই আছেন, কিন্তু তিনি যেন স্পিনারদের নিঃসঙ্গ প্রতিনিধি। মুস্তাফিজুর রহমানের উইকেট ১৫টি, মাশরাফি বিন মুর্তজা ১১ উইকেট নিয়ে আছেন তাঁর ঠিক পরেই।
ক্যানভাসটা পুরো টি-টোয়েন্টিতে ছড়িয়ে দেওয়া হয়, তাহলে আবার সাকিবই সবার ওপরে। বাংলাদেশের হয়ে টি-টোয়েন্টিতে অন্তত ৫০ উইকেট নিয়েছেন শুধু সাকিবই। ৪৪ উইকেট নিয়ে যিনি দুইয়ে আছেন, তিনি কিন্তু একজন স্পিনার। তবে আবদুর রাজ্জাকের জন্য জাতীয় দলের দরজা অনেক দিন থেকেই বন্ধ। ২০ উইকেট নিয়ে সেই তালিকায় পাঁচে যিনি আছেন, সেই মাহমুদউল্লাহর এখন বোলিং থেকে এখন ব্যাটিংয়ের দিকেই বেশি মনযোগ।
সব ধরনের ক্রিকেট মিলিয়ে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি পাঁচজনের চারজনই স্পিনার। ওয়ানডেতে ১০০+ উইকেট নেওয়া চারজনের তিনজনই স্পিনার, তিনজনই বাঁ হাতি। টেস্টেও ১০০+ উইকেট নেওয়া দুই বোলারই বাঁ হাতি স্পিনার। এক সময় সারা বিশ্ব অবাক হয়ে দেখেছিল বাংলাদেশের একের পর এক বাঁ হাতি স্পিনারের আবির্ভাব।
কিন্তু এঁদের কাউকেই কেন জানি ধরে রাখা যায়নি। প্রত্যেকেই জাতীয় দলের কক্ষপথ থেকে বেরিয়ে গেছেন। আবির্ভাবেই বাংলাদেশের সিরিজ জয়ের নায়ক এনামুল জুনিয়র, একই টেস্টে সেঞ্চুরি ও হ্যাটট্রিক দিয়ে ইতিহাস গড়া সোহাগ গাজী; প্রতিশ্রুতিশীল তাইজুল ইসলাম ও ইলিয়াস সানী…।
আল আমিন, মুস্তাফিজ, তাসকিন, মাশরাফিরা থাকায় স্বাভাবিকভাবেই পেস আক্রমণ বাংলাদেশের বড় ভরসা। কিন্তু খেলাটা যখন ভারতের উইকেটে, পথ দেখানোর কথা স্পিনারদেরই। কিন্তু সবেধন নীলমণি সাকিব ছাড়া ভরসা করার মতো আর তেমন কেউ কি আছেন! হা হতোস্মি, এক সময় এই কথাই বরং সাংবাদিকদের লিখতে হয়েছে, দলে মাত্র একজন পেসার কেন!