14rh-year-thenewse
ঢাকা
আজকের সর্বশেষ সবখবর

মহান সমাজ সংস্কারক ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের প্রয়াণ দিবস আজ

ডেস্ক
July 29, 2023 10:09 am
Link Copied!

মহান সমাজ সংস্কারক ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের প্রয়াণ দিবস আজ। তিনি ১৮৯১ সালের ২৯ জুলাই ৭০ বছর বয়সে লিভারের ক্যান্সারে ভুগে কলকাতার বাদুড়বাগানস্থ বাসভবনে ইহলোগ ত্যাগ করেন। মহান মহান জ্ঞানী মানুষরা সমাজের উপর প্রভাব রেখে গেছেন। এইরকমই এক ব্যক্তিত্বের মানুষ ছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। যিনি খুব বিনয়ী এবং নিজের জীবন দৃঢ়সংকল্প আর উদ্দেশ্য পূরণের লক্ষে কাটিয়ে ছিলেন। তিনি মহান সমাজ সংস্কারক, লেখক, শিক্ষক ও উদ্যোক্তা ছিলেন এবং সমাজ পরিবর্তনের জন্য কাজ করে গেছেন অবিরাম। ভারতে শিক্ষার প্রতি তার অবদান এবং নারীর অবস্থার পরিবর্তন জন্য তিনি চিরস্বরণীয়।

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জন্ম পশ্চিমবাংলায় মেদিনীপুর জেলায় বীরসিংহ নামক গ্রামে ১৮২০ সালে ২৬ সেপ্টেম্বর একটি দরিদ্র বাঙালি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। পিতা ঠাকুরদাস বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মাতা ভগবতী দেবী দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করলেও তিনি নিজেদের শিক্ষা, সংস্কার, আন্তরিকতা, কঠোরতা, দয়ালুতা ও নিষ্ঠার জন্য প্রচুর খ্যাতি অর্জন করেছিলেন, যার কারণে তিনি অমর।

ছোটবেলা থেকে তিনি পড়াশুনোয় খুব মেধাবী ছিলেন। তার শিক্ষা জীবনে তিনি ভালো নম্বর প্রাপ্ত করেছিলেন। শিক্ষায় উল্লেখযোগ্য সাফল্যের জন্য স্কলারশিপ অর্জন করেছিলেন। ১৮৪১ সালে তিনি সংস্কৃত নিয়ে পাস করেন। ছাত্রজীবনে সংস্কৃত ভাষা ও দর্শনের অগাধ জ্ঞানের কারণে তাঁকে ‘বিদ্যাসাগর’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়। তখন থেকেই তাঁর নাম পরিবর্তন করে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর রাখা হয়।

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের তার দরিদ্র পরিবারকে সাহায্য করার জন্য সংস্কৃত কলেজে একটি পার্ট টাইম চাকরিতে যোগদান করেন। তিনি বেদান্ত ও জ্যোতির্বিজ্ঞানে বিশিষ্ট জ্ঞান অর্জন করেন। আইন পরীক্ষা সম্পন্ন করেন এবং অবশেষে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজে সংস্কৃত ভাষা শেখানোর জন্য অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। তখন তার বয়স মাত্র ২১ বছর। সেখানে তিনি পাঁচ বছর কাজ করেন এবং শিক্ষা ব্যবস্থায় সংস্কার আনতে চেষ্টা করেছিলেন।

বিদ্যাসাগর একদিকে ছিলেন একজন শিক্ষাব্রতী ও সমাজ সংস্কারক ব্যক্তি, অন্যদিকে তিনি একজন নরম হৃদয় এবং দয়ালু মানুষ ছিলেন। দরিদ্র শিক্ষার্থীদের পড়াশুনোর খরচ বহন করার জন্য তিনি তার বেশিরভাগ বেতন ব্যয় করেন। তিনি তার চারপাশে শিশু ও কিশোর, বিধবাদের ব্যথা অনুভব করেছিলেন এবং তাদের সকলকে তাদের দুর্ঘটনা কমিয়ে আনতে উৎসর্গ করেছিলেন। বরাবর মানুষের দুর্দশায় ঝাঁপিয়ে পড়েছেন।

বিধবা বিবাহ প্রচলন – 

সমাজ সংস্কারে আন্দোলনে বিধবা বিবাহ প্রচলন এবং বাল্য বিবাহ প্রতিরোধ ছিল তার বিশেষ কীর্তি। বিধবা নারীদের জীবন নিয়ে বিদ্যাসাগর ব্যথা অনুভব করেছিলেন। এরপর বিধবাদের বিবাহের পক্ষে আওয়াজ তোলেন।

  • বিবাহ প্রচলিত হওয়া উচিত কিনা এই বিষয়ে তিনি ১৮৫৫ খ্রিষ্টাব্দের পুস্তিকা লিখেছিলেন। পুস্তিকা দুটির ইংরেজি অনুবাদ প্রকাশিত হয় একবছরের মধ্যে।
  • বিদ্যাসাগরের প্রচেষ্টায় শেষ পর্যন্ত ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দে ২৬ শে জুলাই বিধবা বিবাহ আইন পাস হয়।
  • নিজের পুত্রকেই বিধবার সঙ্গে বিয়ে দিয়েছিলেন।
  • ১৮৫৬ থেকে ১৮৬৭ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে নিজের উদ্যোগে অর্থ ব্যয় করে ৬০ জন বিধবার বিবাহ দেন।
  • ১৮৭২ খ্রিস্টাব্দে ‘হিন্দু ফ্যামিলি অ্যানুইটি ফান্ড’ গঠন করেন।

বহুবিবাহ বাল্যবিবাহ বিরোধিতা

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বহুবিবাহ ও বাল্যবিবাহ বিরুদ্ধে ঘোরতর বিরোধিতা করেন এবং আন্দোলন শুরু করেন। ফলস্বরূপ, আইন প্রণয়ন করে মেয়েদের বিয়ের সর্বনিম্ন বয়স ১০ বছর ধার্য করা হয়।

শিক্ষা বিভাগের পরিদর্শক হিসাবে চাকরি করার সময় বিদ্যাসাগর বাংলার দুর্গম অঞ্চলে শিক্ষার দুরবস্থা সরকারের নজরে আনেন। কখনও বা সরকারের সহযোগিতায় অথবা কখনও বা একক প্রচেষ্টায় প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সেই সময়কালে সংস্কৃত কলেজ ছিল সংস্কৃত শিক্ষার রক্ষণশীল কেন্দ্র। বিদ্যাসাগর সংস্কৃত কলেজের শিক্ষা পদ্ধতি সংস্কার সাধন করে তাকে মানবতা নার্সারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রূপে গড়তে চেয়েছিলেন।

পরবর্তীকালে ১৮৫৬ সালে তিনি বরিশায় উচ্চ বিদ্যালয় নামে কলকাতার একটি স্কুল প্রতিষ্ঠিত করেন। তিনি শিক্ষা বিষয়ে নিজস্ব মতামত অনুযায়ী স্কুল চালাতেন। মেয়েদের শিক্ষার আর্থিক সাহায্যের জন্য তহবিল চালু করেছিলেন।

বিদ্যাসাগর বাংলা ভাষার বিকাশেও অবদান রেখেছেন এবং এই অবদানের কারণে তাকে আধুনিক বাংলা ভাষার জনক বলা হয়।

শিশুদের জন্য আধুনিক জীবনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে রচনা করলেন বর্ণপরিচয়, কথামালা, চরিতাবলী, আখ্যানমঞ্জরী, বোধোদয় ইত্যাদি গ্রন্থ। পরে সীতার বনবাস, শকুন্তলা প্রভৃতি। সংস্কৃত ব্যাকরণ উপক্রমণিকা ও ব্যাকরণ কৌমুদী লিখে সংস্কৃত শিক্ষার্থীদের এবং সংস্কৃত পণ্ডিতদের রক্ষণশীল শিক্ষাপদ্ধতি থেকে মুক্তি দিলেন, সরল করলেন সংস্কৃত পাঠ।

http://www.anandalokfoundation.com/