14rh-year-thenewse
ঢাকা
আজকের সর্বশেষ সবখবর

দুর্বল শ্রম আন্দোলন!

admin
May 1, 2016 12:05 pm
Link Copied!

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে নানা সময়ে শ্রম আন্দোলন বিশাল আকার ধারণ করলেও বাংলাদেশে তার অবস্থান খুবই দুর্বল। আর তার পেছনে শ্রম আইনের বাস্তবায়ন না হওয়া, সমন্বয়হীনতাসহ নানা কারণ রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

শ্রমিক নেতাকর্মীদের মতে, মতো বিরোধ আন্দোলনকে যতোটা প্রভাবিত করে তার থেকে বেশি প্রভাবিত করে সমন্বয়হীনতা। সাধারণত শ্রমিক নেত‍াকর্মীদের একপক্ষ শ্রমিকদের পাশে দাঁড়ালে অপরপক্ষ মালিকপক্ষ দ্বারা প্রভাবিত হয় যার ফলে অনেক আন্দোলন অঙ্কুরেই শেষ হয়েছে অতীতে। শ্রম আইন বাস্তবায়ন না হওয়ায় সংগঠিত হতে পারছে না শ্রমিকরা।

শ্রমিকরা সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করলেই তাদের মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হয় বলে অভিযোগ করেছেন শ্রমিক নেত্রী মোশরেফা মিশু।

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, শ্রমিকদের বিষয়ে বরাবরই গণতন্ত্রের কথা বলা হয়। কিন্তু বাস্তবে তার চিত্র পুরোপুরি ভিন্ন। কারখানাতে ট্রেড ইউনিয়ন করার কোনো পরিবেশ নেই। বেশিরভাগ শ্রমিকের চাকরির নিরাপত্তা নেই। তারা আন্দোলন করবে কি করে। শ্রম আইন করা হলেও তার কোনো বাস্তবায়ন করা হয়নি। কখনোই শক্তিশালী শ্রম আন্দোলনের পরিবেশ তৈরি করা সম্ভব নয়। আর তাই আমাদের দেশের শ্রম আন্দোলনের অবস্থা নাজুক, দুর্বল।

মোশরেফা মিশুর সঙ্গে একমত পোষণ করেন রেডিমেট গার্মেন্টস ওয়ার্কাস ফেডারেশনের সভাপতি লাভলী ইয়াসমীন।

বাংলানিউজকে তিনি বলেন, শক্তিশালী শ্রম আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য আইনের প্রয়োগ ও শ্রমিকদের নিজেদের মধ্যে সমন্বয় খুব জরুরি। কিন্তু আমাদের দেশে এ দুটি জিনিষেরই খুব অভাব রয়েছে। শ্রমিক সংগঠনগুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতা রয়েছে চোখে পড়ার মতো। তাছাড়া শ্রম আইনের সঠিক প্রয়োগ না হওয়ার ফলে শ্রমিকদের সারাক্ষণ চাকরি নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভুগতে হয়। ফলে শ্রম আন্দোলন তার আশানুরূপ পর্যায়ে পৌছাতে পারছে না।

দেশের শিল্পখাতে প্রবৃদ্ধি বাড়লেও গুণগত উন্নয়ন হচ্ছে না বলে দাবি করছেন সমাজ বিজ্ঞানীরা। এসএসই’এর  (সোসাইটি  ফর স্যোসাল সিকিউরিটি এনহেন্সমেন্ট) এর সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ বিভাগের শিক্ষক তৌহিদুল হক বাংলানিউজকে বলেন, উন্নত বিশ্বে শিল্পের প্রবৃদ্ধির সঙ্গে গুণগত মানের দিকেও নজর দেওয়া হয়। কিন্তু আমাদের দেশের শিল্পের প্রবৃদ্ধি বাড়লেও শ্রমিকদের ক্ষেত্রে গুণগত মান বাড়েনি। তার মূল কারণ মালিকদের মুনাফাভোগী মনোভাব। দেশের এখনো ৮০ শতাংশের বেশি কারখানার শ্রমিকরাই লিখিত কোনো নিয়োগপত্র পান না। ফলে সহজেই তাদের চাকরি চলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই অন্যায় হলেও মুখ বুঝে সহ্য করেন তারা। যার ফলে দেশের শ্রম আন্দোলন এখনো শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করতে পারছে না।

আসন্ন মে দিবসে শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি বাড়ানোর জন্য দাবি তোলা হবে যাতে সামনে এই ইস্যুতে আন্দোলন শক্তিশালী হতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন টেক্সটাইল গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক তপন সাহা।

তপন সাহা বাংলানিউজকে বলেন, পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের জন্য বর্তমানে ন্যূনতম মজুরি ৫ হাজার ৩০০ টাকা নির্ধারিত আছে। কিন্তু দ্রব্য মূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে এই ৫ হাজার ৩০০ টাকায় জীবন নির্বাহ করা অসম্ভব হয়ে দাড়িয়েছে। তাই মে দিবস থেকেই আমরা ন্যূনতম মজুরি বাড়ানোর দাবিতে সবাই সমন্বিত হবো বলে আশা করছি।

দেশের পোশাক শিল্পে বর্তমানে প্রায় ৫ হাজার ৩০০ কারখানা রয়েছে। এসব কারখানায় প্রায় ৪০ লাখ লোক কাজ করেন। বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাকের (কেবলমাত্র ওভেন শার্ট) প্রথম চালানটি রপ্তানি হয় ১৯৭৮ সালে। এরপরেই বিদেশি ক্রেতাদের আগ্রহ বাড়ে। ১৯৮১-৮২ সালে মোট রপ্তানি আয়ে এই খাতের অবদান ছিল মাত্র ১.১ ভাগ। ২০১০ সালের মার্চ মাসে তৈরি পোশাক শিল্পের অবদান দাঁড়িয়েছে মোট রপ্তানি আয়ের ৭৬ ভাগ। সময়ের পরিক্রমায় তৈরি পোশাক আরও সম্প্রসারিত হয়ে ওভেন এবং নিটিং উপখাতে বিভক্ত হয়। ২০০২ সালে পোশাক রপ্তানিতে ওভেন ও নিটিং-এর অবদান ছিল যথাক্রমে ৫২.০৬ ভাগ এবং ৮.৫৮ ভাগ। পরবর্তীকালে নিট পোশাক উপখাত ওভেন উপখাতের তুলনায় দ্রুত বৃদ্ধি পায়। ২০০৮-০৯ অর্থ বছরে নিট উপখাত ওভেন উপখাতকে অতিক্রম করে সমগ্র রপ্তানিতে ৪১.৩৮ ভাগ (৬৪২৯ মিলিয়ন ডলার) অবদান রাখে, বিপরীতে ওভেন পোশাক ৩৮.০২ ভাগ (৫৯১৮.৫১ মিলিয়ন ডলার) নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে নেমে আসে। ২০০৮-০৯ অর্থ বছরে নিট ও ওভেন একত্রে আমদানিকৃত কাঁচামালের মূল্যসহ সাড়ে ১২ বিলিয়ন ডলারে উপনীত হয়। প্রায় ৩০  লাখ নারী শ্রমিকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে এই শিল্প।

http://www.anandalokfoundation.com/