আরিফ মোল্ল্যা,ঝিনাইদহ॥ ০১ডিসেম্বর’২০১৭: শত বাধার মাঝেও স্বপ্ন দেখছেন শিল্প উদ্যোক্তা আক্কাচ আলী। কয়েকবার কয়েকটি প্রতিষ্ঠান করেও সফলতার মুখ দেখেননি তিনি। তবুও আক্কাচ আলী হাল ছাড়েননি। এবার তিনি নতুন করে ভিন্ন ধরনের প্রতিষ্ঠান গড়ার স্বপ্ন দেখছেন। এবার প্রকল্প হাতে নিয়েছেন বৃহত্তর যশোরের যশ খেজুরের রস নিয়ে।
যখন নিপা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ভয়ে মানুষ খেজুরের রস খাওয়া প্রায় ছেড়েই দিয়েছে। ভুলতে বসেছে রসের স্বাদ। তখন বাংলার মানুষকে আবারো খেজুরের রস খাওয়ানোর উদ্যোগ নিয়েছেন আক্কাচ আলী। বিশেষ করে প্রবাসী তার প্রধান লক্ষ্য ।
এ বিষয়ে তিনি বলেন- কবে খাওয়াতে পারবো তা জানিনা। তবে ঐতিহ্য রক্ষার স্বপ্ন একদিন ঠিকই পূরণ হবে।
আক্কাচ আলী ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার খয়েরতলা গ্রামের শিল্প উদ্যোক্তা। যার উদ্যোগে কালীগঞ্জে গড়ে ওঠেছে তিনটি শিল্প প্রতিষ্ঠান। কিন্তুু বর্তমানে একটিও তার তত্ত্বাবধানে নেই। এজন্য তিনি নতুন করে নতুন প্রতিষ্ঠান গড়ার স্বপ্ন দেখছেন।
স্ব-শিক্ষিত আক্কাচ আলী বলেন, ‘ছোট খাট ব্যবসা ও আখ চাষ করে যখন মোটামুটি স্বচ্ছল তখন নিজ গ্রামের শিক্ষিত ব্যক্তি বড় ভাই ডক্টর রুস্তম আলীর সাথে আমার সাক্ষাত হয়। সাক্ষাতকালে তিনি বলেন সমাজের জন্য কিছু করতে হবে। এটি ১৯৯৭ সালের কথা। সেময় আমি তাকে একটি প্রতিষ্ঠান করার ধারনা দেই এবং বলি প্রতিষ্ঠানটি গড়তে পারলে একদিকে যেমন নিজেরা লাভবান হবো অন্যদিকে এলাকার মানুষ কাজ করে নিজেদের স্বাবলম্বী করতে পারবে। তিনিও আমার সাথে একমত হন।
তিনি বলেন, ‘দৌলতদিয়া ঘাট এলাকায় একটি পোল্ট্রি হ্যাচারিতে আমার যাতায়াত ছিল। সেখান থেকে মাথায় আসে এমন একটি প্রতিষ্ঠান গড়ার। কয়েক জন মিলে ১৯৯৮ সালে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার খয়েরতলা গ্রামে ইউনিভার্সেল পোল্ট্রি হ্যাচারিজ লি. নামে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলি। হ্যাচারীতে এক পর্যায়ে প্রতি হ্যাচে ৫৫ হাজার বাচ্চা পাওয়া যেত। এতে প্রতিষ্ঠানটি বেশ লাভজনক অবস্থায় পৌঁছে। কিন্তু বিধিবাম। ২০০১ সালে দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে বার্ড ফ্লু। হ্যাচারির মুরগী ওই রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। একই রোগে খামারীদের মুরগীও মারা য়ায়,ধ্বস নামে প্রতিষ্ঠানে। দিনের পর দিন লসের বোঝা বাড়তে থাকায় ২০০১ সালের শেষের দিকে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করে দেয়া হয়।
সময়ের আর্বতে বার্ডফ্লুর প্রকোপ কমতে থাকে। হ্যাচারি বিক্রির টাকা দিয়ে ও কয়েকজনকে শেয়ার নিয়ে আবারো কালীগঞ্জ উপজেলার বেজপাড়ায় মৈত্রী পোল্ট্রি এন্ড ফিস হ্যাচারীজ নামের আরেকটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন তিনি। ২০০২ সালে ২৯ একর জমিতে এ প্রতিষ্ঠান কয়েক বছর ভালোই চলছিল। এক পর্যায়ে অন্য শেয়ার হোল্ডারদের সাথে দূরত্ব সৃষ্টি হওয়ায় ২০০৮ সালে জেসন কোম্পানির কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করে দেন।
এরপর একক ভাবে কিছু করার প্রায়াসে উপজেলার বেজপাড়ায় আক্কাস আলী স্পেশাল কোল্ড স্টোরেজ গড়ে তোলেন। ২০০৯ সালে প্রতিষ্ঠানটি বানিজ্যিকভাবে আসে এবং পরপর ২ বছর লস হয় প্রতিষ্ঠানটিতে। এ প্রতিষ্ঠান করার সময় তিনি ব্যাংক থেকে মোটা অংকের টাকা লোন নিয়েছিলেন। প্রতিষ্ঠান থেকে যা আয় হতো তা দিয়ে ব্যাংক লোনের বাৎসরিক মুনাফা পরিশোধ হচ্ছিল না। দেওলিয়া হওয়া থেকে রেহাই পেতে ২০১১ সালে ফারইষ্ট ইসলামী ইন্সুরেন্সের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করে দেন তিনি।
পরে নতুন করে কিছু করার আশায় কালীগঞ্জ শহরের কলাহাটায় ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের পাশেই ১৬ শতক জমি কিনে ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। এদিকে বেশ কয়েক কোটি টাকা অন্যের হাতে আটকে পড়ায় নতুন প্রোজেক্ট প্রতিষ্ঠার চিন্তা মাথায় আসলেও তা গড়তে বিলম্ব হচ্ছে। আটকে পড়া টাকা হাতে পেলে নতুন প্রজেক্ট নিয়ে সামনে এগোতে চান তিনি।
নতুন প্রজেক্ট নিয়ে কথা হলে তিনি বলেন, যশোরের যশ খেজুরের রস হারিয়ে যেতে বসেছে। বিভিন্ন কারনে মানুষ এখন রসের স্বাদ ভুলতে বসেছে। আমি আবারো মানুষকে খেজুরের রস খাওয়াবো। প্রতিষ্ঠানটি করতে পারলে বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে। এলাকায় খেজুর গাছ বৃদ্ধি পাবে। চাষীদের আয় রোজগারও বৃদ্ধি পাবে। তিনি জানান, বিভিন্ন এলাকায় খেজুর রসের হাট বসবে। ওইসব হাট থেকে আমার প্রতিষ্ঠানের গাড়ি গিয়ে রস সংগ্রহ করে আনবে। ওই রস কারখানায় রিফাইনিং হবে। জীবানু মূক্ত করা হবে। প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে মানুষের হাতে পানিয় বোতলের ন্যায় পৌঁছে দেয়া হবে। পর্যায়ক্রমে প্রবাসীদের জন্য এ রস রপ্তানী করা হবে। এতে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন অর্জিত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
এবার সফল হবেন কিনা-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন আমি সফল না হলেও প্রতিষ্ঠানগুলো এখনও টিকে আছে। একটু থেমে বলেন, আমি যে তিনটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছিলাম তাতে আমি সফল না হলেও যাদের কাছে প্রতিষ্ঠানগুলো বিক্রি করেছি তারা সফলতা পেয়েছেন। আমার মতো একজন অক্ষরজ্ঞানহীন মানুষ এলাকায় এমন প্রতিষ্ঠান গড়েছিলাম বলেই আজ এলাকার মানুষ ওইসব প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে পারছে। নিজে প্রতিষ্ঠানগুলো ধরে না রাখতে পারলেও- এতেই খুশি আমি