জার্মানিতে ‘রাইখবুর্গার’ বা রাইখ সিটিজেনস মুভমেন্ট নামের ডানপন্থী একটি রাজনৈতিক গোষ্ঠীর অভ্যুত্থানের চেষ্টা বানচাল করে দিয়েছে পুলিশ। গত বুধবার অভ্যুত্থানের চেষ্টাকারীদের বিরুদ্ধে পুলিশ অভিযানে নামে। এ সময় অভ্যুত্থানে জড়িত থাকার সন্দেহে ২৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। অভ্যুত্থানের চেষ্টা করা গোষ্ঠীর মধ্যে জার্মান সেনাবাহিনীর বেশ কয়েকজন সাবেক সৈন্য এবং সাময়িক বরখাস্ত পুলিশ কর্মকর্তাও আছেন। চরমপন্থী গোষ্ঠীতে ৫৮ বছর বয়সী নব্য নাৎসিদের অনুসারী দল (এএফডি) বির্গিট মালস্যাক উইঙ্কম্যান নামের একজন সাবেক নারী সংসদ সদস্যও আছেন। তিনি বার্লিনে একটি আদালতের বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন।
জার্মানির সরকারি কৌঁসুলিরা জানিয়েছেন, রাইখ সিটিজেনস মুভমেন্ট সদস্যরা, পার্লামেন্টে (রাইখস্ট্যাগ) হামলা চালিয়ে সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে চেয়েছিল। তারা পার্লামেন্ট ভবনে আক্রমণ চালিয়ে, গৃহযুদ্ধের মতো পরিস্থিতি তৈরি করার পরিকল্পনা করে – সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার পরিকল্পনা এঁটেছিল। এটি ছিল, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর স্মরণকালের জার্মান ইতিহাসে অভূতপর্ব অভ্যুত্থান ঘটানোর প্রচেষ্টা।
অভ্যুত্থানের মূল হোতা দু’জন। তারা হলেন ৭১ বছর বয়সী অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তি, যিনি যুবরাজ রিয়েস বা স্বঘোষিত হাইনরিশ ত্রয়োদশ নামে পরিচিত এবং রুডিগার ভন পি নামের একজন সাবেক প্যারাট্রুপার কমান্ডার। এই দু’জন মিলে এই অভ্যুত্থানের পরিকল্পনা সাজিয়েছিলেন। এই কাজে তারা চরম ডানপন্থী নারী ও পুরুষ সহযোগীদের নিয়োগ করেছিলেন। মূলত ২০২১ সালেই জার্মান পার্লামেন্ট (রাইখস্ট্যাগ) হামলার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। পরে এই অভ্যুত্থানের পরিকল্পনা কিছুদিন পিছিয়ে দেওয়া হয়।
১৯৮০–এর দশকে জার্মানিতে রাইখ সিটিজেনস মুভমেন্ট গোষ্ঠীর আবির্ভাব। ২০১৩ সাল থেকে গোষ্ঠীটি নানান হিংসাত্মক ঘটনায় জড়িয়ে পড়ে। জার্মানির ফেডারেল ক্রিমিনাল পুলিশ দপ্তর থেকে জানানো হয়েছে, ২০১৫ থেকে ২০১৭ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত সাড়ে ১০ হাজার ফৌজদারি অপরাধ সংগঠিত করেছেন গোষ্ঠীর সদস্যরা।
রাইখ সিটিজেনস মুভমেন্ট গোষ্ঠী ফেডারেল রিপাবলিক অব জার্মানি বা গণপ্রজাতন্ত্রী জার্মানির অস্তিত্বকে অস্বীকার করে। এ ছাড়া রাষ্ট্র ও তার আইনি ব্যবস্থাকেও প্রত্যাখ্যান করে তারা। এই গোষ্ঠী তথাকথিত জার্মান রাইখ নাগরিকদের প্রতিনিধিত্ব করে। তাদের মতাদর্শ হলো গণতন্ত্রকে প্রত্যাখ্যান ও রাজতন্ত্রই আদর্শিক উপাদান। এই গোষ্ঠী বহুত্ববাদী সমাজকে প্রত্যাখ্যান করার মনোভাব পোষণ করে।
উল্লেখ্য, জার্মানির সাবেক চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মার্কেল, ইরাক-সিরিয়া-আফগানিস্তান প্রভৃতি দেশ থেকে আগত বিশাল সংখ্যক শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছিলেন। এই শরনার্থীদের মধ্যে কেউ কেউ চুরি, ছিনতাই, ধর্ষণ প্রভৃতি অপরাধমূলক এবং ধর্মীয় উগ্রবাদী কার্যকলাপ চালানোর অভিযোগে অভিযুক্ত। যে কারণে জার্মান নাগরিকদের একাংশ ভীষণ ক্ষুব্ধ। এই ক্ষোভ ডানপন্থীদের অভ্যুত্থান প্রচেষ্টায় প্রেরণা জুগিয়েছে বলে, ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা।