ঢাকায় গত সোমবার রাতে, তেজগাঁও শিল্প এলাকার বিজি প্রেসের সামনের রাস্তায় শীর্ষ সন্ত্রাসী তারিক সাঈদ ওরফে মামুনের প্রাইভেট কার লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়ে একদল সন্ত্রাসী। এ সময় মোটরসাইকেলে করে ওই পথ দিয়ে নিজ বাসায় ফিরছিলেন ভুবন চন্দ্র শীল (৫২)। তখন তার মাথায় গুলি লাগে। ভুবনকে প্রথমে শমরিতা হাসপাতালে, পরে সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। রাত দেড়টার দিকে ভুবনকে পপুলার হাসপাতালে স্থানান্তর করেন স্বজনেরা।
আজ ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার কিছু পরে রাজধানীর ধানমন্ডির বেসরকারি একটি হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। সেখানে তিনি লাইফ সাপোর্টে ছিলেন। ভুবন গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর থেকে তার স্ত্রী রত্না চন্দ্র শীল, তার একমাত্র মেয়ে ভূমিকা চন্দ্র শীল এবং দুই ভাইকে নিয়ে হাসপাতালেই রয়েছেন।
শনিবার দিবাগত রাত পৌনে ৯টা থেকে পৌনে ১২টা পর্যন্ত ৩ ঘণ্টা ভুবনের মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচার চলে। অস্ত্রোপচার সফল হয়েছে কি না, তা ৭২ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণ করার পর জানানো হবে বলে জানিয়েছিলেন চিকিৎসকেরা। তবে গতকাল রোববার বেলা ১১টা থেকে তার অবস্থার অবনতি হতে থাকে। গতকাল চিকিৎসকেরা বলেছিলেন, ভুবন চিকিৎসায় কোনো সাড়া দিচ্ছেন না।
ভুবন গোমতী টেক্সটাইল লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠানের আইনি পরামর্শক হিসেবে কাজ করতেন। গুলশানে তার কার্যালয়। তার স্ত্রী–সন্তান থাকেন নোয়াখালীতে। আরামবাগে একটি বাসায় থাকতেন ভুবন চন্দ্র শীল। ভুবনের আহত হওয়ার খবর শুনে ঢাকায় ছুটে এসেছেন তার স্ত্রী রত্না রানী শীল ও একমাত্র মেয়ে সদ্য এসএসসি পাস করা ভূমিকা চন্দ্র শীল।
ভুবন চন্দ্র শীলের শ্যালক তাপস মজুমদার সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, তার বোন রত্না রানী শীল নোয়াখালীর মাইজদির একটি উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক। তবে তার ভগ্নিপতিই ছিলেন পরিবারের মূল উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তিনি চাকরি থেকে মাসে ৩০–৪০ হাজার টাকার মতো বেতন পেতেন। ঢাকা থেকে ১৫–২০ দিন পরপর নোয়াখালীতে গিয়ে সংসারের খরচ দিয়ে আসতেন। তার বোন–ভগ্নিপতির সংসারে তেমন কোনো সঞ্চয় নেই জানিয়ে তাপস বলেন, প্রথম দিন এই হাসপাতালে চিকিৎসার খরচ ৯৩ হাজার টাকা দিতে হয়েছে। দ্বিতীয় দিনে বিল এসেছে ৬৭ হাজার টাকা। ধারদেনা করে হাসপাতালের বিল দিতে হয়েছে।
ভুবনের বাবা কৃষ্ণ কুমার শীল মারা গেছেন ২৩ বছর আগে। ভুবনের মা গিরিবালা শীলের বয়স ৭৫ বছর। তিনি ভুবনের স্ত্রী রত্না রানী শীলের সঙ্গে নোয়াখালীতে থাকেন। তিনিও বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত। স্মৃতিশক্তি হ্রাস পেয়েছে, কথা বলতে পারেন না। ভুবন মা-বাবার একমাত্র সন্তান ছিলেন।